ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫: সুন্দরবনের রাজা আজও অস্তিত্ব সংকটে

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা 

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ২৯ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫: সুন্দরবনের রাজা আজও অস্তিত্ব সংকটে

ছবিঃ সংগৃহীত

বাঘ থাকবে বনে, পৃথিবী ফিরবে আপন ছন্দে। "মানুষ-বাঘের সুরেলা সহাবস্থান"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। দিনটি শুধুই একটি প্রতীকী দিবস নয়, বরং বাঘ সংরক্ষণের জন্য বৈশ্বিক সচেতনতা ও অঙ্গীকারের দিন।

‍সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার: অস্তিত্বের লড়াই

সুন্দরবন—বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন—যেখানে রাজত্ব করে ‘রায়েল বেঙ্গল টাইগার’। এই বন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গর্ব হলেও, এখানকার বাঘগুলো দিনদিন বিপন্ন হয়ে উঠছে। বনাঞ্চলের পরিধি কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, এবং মানুষের অনুপ্রবেশ ও বনজ সম্পদের লোভ—এসব কারণে বাঘের আবাসস্থল সঙ্কুচিত হচ্ছে।

এছাড়া, চোরা শিকারিদের ফাঁদ, বনবিভাগে দুর্বল নজরদারি এবং সচেতনতার অভাবও বাঘের জন্য বড় হুমকি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঘ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অঞ্চল চিহ্নিত করে তার শিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে। সেই ক্ষেত্র সংকুচিত হলে, বাঘের মধ্যে সংঘাত, খাদ্যসংকট এবং মানুষের সাথে সংঘর্ষ বেড়ে যায়।

‍আলোর রেখা: বাড়ছে বাঘের সংখ্যা

২০২৪ সালের সর্বশেষ ক্যামেরা ট্র্যাপ জরিপে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টি। ২০১৮ সালে ছিল ১১৪টি, আর ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি। এই বাড়তি সংখ্যার মাঝে ২১টি বাঘশাবকও রয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।

বনবিভাগ, WWF, বেসরকারি সংগঠন, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অগ্রগতি হলেও, এটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয়। সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “চোরা শিকারিদের আন্তর্জাতিক চক্র এখনো সক্রিয়। সীমান্ত এলাকায় পাচার এখনো রোধ করা যায়নি।”

‍বাঘ রক্ষায় আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার

২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত “Tiger Summit”-এ ১৩টি বাঘ-অধ্যুষিত দেশ ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করে। বাংলাদেশও সেই প্রতিশ্রুতির অংশ। যদিও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্য অর্জন হয়নি, তবু সচেতনতা ও প্রয়াস অনেক বেড়েছে।

‍মানুষ-বাঘের দ্বন্দ্ব নয়, সহাবস্থান চাই

প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ কখনোই শান্তিতে থাকতে পারে না। বাঘের মতো শীর্ষ শিকারি প্রাণীর অবলুপ্তি পুরো বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষকরা বলছেন, সুন্দরবনে বাঘ না থাকলে হরিণের সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে যাবে, যা বনাঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করবে। এভাবে এক প্রাণী হারালে পুরো ইকো-সিস্টেম মুখ থুবড়ে পড়ে।

তাই এখন দরকার শুধু বন রক্ষা নয়, মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন। বাঘের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নয়, সহাবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে তবেই প্রকৃতি ফিরবে আপন ছন্দে।

নোভা

×