
বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল সফল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় চীন
বাংলাদেশ বর্তমানে সংস্কার ও উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব অতিক্রম করছে। এ গুরুত্বপূর্ণ যাত্রায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি চীনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও সফল জাতীয় নির্বাচন এবং দেশের প্রেক্ষাপটে উপযুক্ত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় চীনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতা অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ‘ডিক্যাব’ আয়োজিত ডিক্যাব টক আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন জানান, চীন চাইছে বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল, সফল অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ নির্বাচন সফল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের পূর্ণ অধিকার রয়েছে যা কোনো বাইরের দেশের মানুষের এ অধিকার নেই।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাবেক ডিক্যাব সভাপতি শামিম আহমেদের মৃত্যুতে এবং সম্প্রতি উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু ও অন্যান্য নিরীহ মানুষের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার তিস্তা প্রকল্পে চীনের কোম্পানিগুলোকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমরা অপেক্ষা করছি বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে এই প্রকল্পের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব করবে। আমাদের অবস্থান হলো, বাংলাদেশ যদি চায় চীন এই প্রকল্পে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
তিস্তা নদী পুনর্বাসন ও বহুমুখী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন একেবারেই প্রস্তত। এখন বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিলে চীন দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারবে।
দীর্ঘদিন ধরেই তিস্তা নদীকে ঘিরে একটি পূর্ণাঙ্গ পানি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আলোচনা চললেও এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়াই একমাত্র টেকসই সমাধান। তবে মিয়ানমারের রাখাইনে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল নয়।
এ বিষয়ে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান তিনি। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অভিযোগ করেছেন, চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির প্রথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা জানিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, গত ১০ বছরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগকে ব্যহত এবং প্রতিরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন আমরা পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেছি এবং দলগুলোও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে চায়। আমি মনে করি, দুই পক্ষের মধ্যে দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কে চীনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে বাধা দিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি গত ১০ বছরে কি অবস্থা ছিল। আপনারা বুঝতে পারেন, আমরা কেন এ ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম।
চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর একটি উচ্চ পর্যায়ের দল চীন সফর করেছে। সেটি সফল ছিল। এটি দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, আমার ধারণা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভিন্ন ধরনের মতামত থাকতে পারে, কিন্তু চীন-বাংলাদেশ সর্ম্পকের বিষয়ে তাদের মতামত একই। সব প্রধান দলগুলো বাংলাদেশ-চীন ভালো সম্পর্ক রাখার পক্ষে।
রাষ্ট্রদূত মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেটির বিষয়ে বাংলাদেশও তাদের অবস্থান তৈরি করেছে। আমি একজন বিদেশি কূটনীতিক হিসেবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান হলো, আমরা পাল্টা শুল্কের বিরোধিতা করি।
আমরা মনে করি, এটি প্রভাব বলয় রাখার জন্য একপক্ষের একটি উদ্যোগ। এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য ভালো নয়। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিকে খাটো করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে খাটো করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চীন ঠেকাও’ উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি বিশ্বাস করি, এটি সম্ভব নয়। পৃথিবীর ১০০টিরও বেশি দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হলো চীন এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। একটি চুক্তির মাধ্যমে আমাদের প্রভাব খাটো করা যাবে না।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ কোনোভাবেই তৃতীয় কোনো পক্ষবিরোধী জোট নয়। এটি নিয়ে অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কিছু নেই।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। এ উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। এটি কোনোভাবেই তৃতীয় কোনো পক্ষবিরোধী জোট নয় এবং এ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। এটি নিয়ে অন্য কোনো দেশের উদ্বেগের কিছু নেইও।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এর লক্ষ্য উন্নত ও সমৃদ্ধ প্রতিবেশী গড়ে তোলা এবং তাদের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখা। মার্কিন শুল্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্যারিফ নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে করে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
প্যানেল হু