ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

আবারও তদন্তের মুখে চীনের শাওলিন ‘কুংফু’ মঠের প্রধান ভিক্ষু

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৯ জুলাই ২০২৫

আবারও তদন্তের মুখে চীনের শাওলিন ‘কুংফু’ মঠের প্রধান ভিক্ষু

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত চীনের শাওলিন মঠের প্রধান ভিক্ষু শি ইয়ংশিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, একাধিক নারীর সঙ্গে ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ এবং ‘অবৈধ সন্তানের জনক’ হওয়ার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির একাধিক সংস্থা। রবিবার (২৭ জুলাই) মঠ কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের হেনান প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত দেড় হাজার বছরের পুরনো এই শাওলিন মঠ প্রতি বছর হাজার হাজার শিষ্যের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, যাদের মধ্যে অনেকে বিদেশ থেকেও আসেন। কুংফু ও বৌদ্ধ ধর্মচর্চার জন্য বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব ১৯৯৯ সাল থেকে পালন করে আসছেন শি ইয়ংশিন। মঠকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে পরিণত করায় তিনি ‘সিইও সন্ন্যাসী’ নামেও পরিচিত।

তবে সাম্প্রতিক তদন্তের পর চীনের বৌদ্ধ সংস্থা জানিয়েছে, শি ইয়ংশিনের অধ্যাদেশ সনদ (ordination certificate) বাতিল করা হয়েছে। এটি মূলত কোনো ব্যক্তির সন্ন্যাসজীবনে প্রবেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়।

বৌদ্ধ সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শি ইয়ংশিনের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। এতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি ও সন্ন্যাসধর্মের মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

শি’র অধীনেই শাওলিন মঠ চীনের বাইরে স্কুল স্থাপন করে এবং ভ্রমণকারী কুংফু দলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাওলিন কুংফু প্রদর্শনী চালু করে। তবে এবারের তদন্তের খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে এটি সোমবার সকালে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়।

মঠের প্রধানের নিজস্ব ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট, যেখানে প্রতিদিন বৌদ্ধ শিক্ষার বার্তা শেয়ার করা হতো, সেটির সর্বশেষ পোস্ট ২৪ জুলাইয়ের তারিখে দেখা গেছে। ফলোয়ার সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি।

এর আগেও, ২০১৫ সালে শি ইয়ংশিনের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল—অসামাজিক সম্পর্ক, মঠের অর্থ আত্মসাৎ এবং ব্যয়বহুল উপহার গ্রহণের অভিযোগ, যার মধ্যে একটি বিলাসবহুল এসইউভি ও সোনার সুতায় তৈরি গাউনও ছিল। যদিও সে সময় তদন্ত শেষে তাকে অভিযোগমুক্ত ঘোষণা করা হয়।

তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ব্যক্তিগত জীবনে কিছুটা নমনীয়তা থাকলেও (যেমন, মাংস খাওয়া বা প্রেমের সম্পর্ক), দুর্নীতির অভিযোগে সমাজে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

শি ইয়ংশিন যদি এবারও আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে চীনা জনগণের কাছে তার সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

শাওলিন মঠের ভাবমূর্তি, যা একসময় আধ্যাত্মিকতা ও শারীরিক শৃঙ্খলার প্রতীক ছিল, এখন তা নতুন করে প্রশ্নের মুখে।

 

সূত্র: বিবিসি।

রাকিব

×