ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় পৌঁছাল বোতলভরা খাবার, ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠল উপত্যকা

প্রকাশিত: ০০:৩২, ২৯ জুলাই ২০২৫

গাজায় পৌঁছাল বোতলভরা খাবার, ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠল উপত্যকা

ইতিহাসের নজিরবিহীন এক মানবিক সংকটের মুখোমুখি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের ফলে সেখানে চরম খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট দেখা দিয়েছে। অপুষ্টিতে ভুগে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শিশু ও অসুস্থ মানুষ। এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতিতে মিশরের কিছু নাগরিক মানবিক এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেন সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসিয়ে গাজায় খাবার পৌঁছানোর চেষ্টা।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মিশরের কয়েকজন নাগরিক এক বা দুই লিটারের প্লাস্টিক বোতলে চাল, ডাল ও শুকনো খাবার ভরে ভূমধ্যসাগরে ছুড়ে দিচ্ছেন। তাদের বিশ্বাস, হয়তো এসব খাবার একদিন গাজার উপকূলে পৌঁছাবে। অবাক করার বিষয় হলো, সেই বিশ্বাস সত্যি হয়েছে। বোতলে ভরা খাবার আসলেই পৌঁছেছে গাজার এক মৎস্যজীবীর হাতে।

ভবিষ্যতের জন্য এক আশার আলো হয়ে আসা এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম TRT World। ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার ওই জেলে সমুদ্র থেকে বোতলটি উদ্ধার করে আবেগে কেঁপে ওঠেন এবং উচ্চস্বরে বলেন, “আল্লাহু আকবার!” তিনি জানান, “মিশরের ভাইয়েরা চাল-ডাল ভর্তি বোতল পাঠিয়েছেন। এর মানে আজ আমরা ডাল খেতে পারব।” বোতলের মধ্যে একটি বার্তাও ছিল, যাতে লেখা ছিল  “মিশর দীর্ঘজীবী হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় মিশর, আরব বিশ্ব এবং ইসলামিক উম্মাহ দীর্ঘজীবী হোক।”

জানা যায়, গত ২৩ জুলাই এক মিশরীয় ব্যক্তি গাজার উদ্দেশে সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে বোতল ছুড়ে দেন এবং কণ্ঠভরে বলেন, “গাজার ভাইয়েরা, আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা এর বেশি কিছু করতে পারছি না।”

এই উদ্যোগকে ইসরায়েলের বর্বর অবরোধের বিরুদ্ধে এক মানবিক প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, ইসরায়েলের কঠোর নীতির কারণে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে লাখো মানুষ অনাহারে দিন পার করছেন। এই মানবিক আন্দোলনে লিবিয়া, টিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও মরক্কোর জনগণকেও অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

স্থানীয় আরবি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সমুদ্রপথে বোতলের মাধ্যমে খাবার পাঠানোর এই ব্যতিক্রমী ধারণাটি এসেছে “বোতলের বার্তা” কনসেপ্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। এই উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাপানে বসবাসরত এক মিশরীয় প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ।

এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অপুষ্টিজনিত কারণে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন নারী ও শিশুর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে।

এই ঘটনা বিশ্ববাসীর সামনে এক প্রশ্ন রেখেছে যেখানে বিশ্বশক্তিগুলো নীরব, সেখানে মানবতা কি নতুন পথ দেখাতে পারে? এক বোতল খাবার, একফোঁটা মানবতা গাজার মানুষদের জন্য হয়ে উঠেছে জীবনের আশার প্রদীপ।

Jahan

×