
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সবাইকে ম্যানেজ করে ১০ বছর ধরে একই পদে বহাল আছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্তে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
গত ২৭ জুলাই প্রধান বয়লার পরিদর্শক আবদুল মান্নানকে অপসারণ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলসাদ বেগম ও সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী সচিব সোহেরা নাসরীন। এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অন্য আরেকটি অভিযোগ শিল্প মন্ত্রণালয়ের জিআরএস সফটওয়্যারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ যাচাই বাছাই করেই ডিজিটাল মাধ্যমে অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়। এই সফটওয়্যারের কার্যক্রম প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মাধ্যমে তদারকি করা হয়। প্রধান বয়লার পরিদর্শকের অভিযোগটি এখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা (অনিক) ড. মো. সাইফুল ইসলাম তদন্ত শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ জুলাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনিক কর্মকর্তা ও উপপ্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মো. ফজলে রাব্বির নিকট অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে মতামত প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. নূরুজ্জামান এনডিসি জনকণ্ঠকে বলেন, বয়লার পরিদর্শক মান্নানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এটা সত্য। তবে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তদন্ত রিপোর্ট আসার আগে তিনি নির্দোষ এবং তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। তিনি এর বাইরে আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তবে বয়লার পরিদর্শক মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সহায়তায় ঘুষের মাধ্যমে আব্দুল মান্নান প্রধান বয়লার পরিদর্শক পদ হাতিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে তার মামাশ্বশুর ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, চাচাশ্বশুর আওয়ামী লীগপন্থি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সলানের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হন সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর। এই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে ঘুষ দিয়ে এই পদে নিয়োগ পান মান্নান। এর পর তিনি বয়লারের বিভিন্ন সেক্টর থেকে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেন। নিজ ভাগ্নের নামে প্রতিষ্ঠান ‘টেকনো কেয়ার’-এর মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ডিজাইন করানো হতো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ঘুষ দিয়ে এসব ইন্ডাস্ট্রিয়াল বয়লারের অনুমোদন মিলত। তবে টেকনো কেয়ারের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজাইন করালে সেটির অনুমোদন মিলত না।
সূত্র বলছে, মান্নান কার্যালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বয়লার নির্মাণ, বয়লার নিবন্ধন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও বয়লার অপারেটর সদন প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ডিজাইন ও এর অনুমোদন বাবদ ৮ স্তরের প্রতি স্তরে ১৫-২৫ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হতো। এই টাকা সরাসরি প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের নিকট দিতে হতো। শর্ত না মেনে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও নিয়োগ কমিটির সদস্যসচিব মো. শরাফত আলী যথাযথ জেলা কোটা অনুসরণ না করে, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের বিনিময়ে বয়লার টেকনিশিয়ান পদসহ নানা পদে বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানের মিরপুর ডিওএইচএস এর ৬ নম্বর রোডের ৪১৬ নম্বর গ্রিন উড সাউথ শাইন বিল্ডিং ২২৫০ বর্গফুটের দুইটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। যার মূল্য ৭ কোটি টাকা। রাজবাড়ী শহরে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি ডাবল ইউনিটের বহুতল আলিসান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের কাছে ৫ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ কাঠা জমি, ঢাকার হেমায়েতপুরে সুগন্ধা হাউজিংয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৮ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন। এ ছাড়া ঢাকার অভিজাত এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট এবং প্লট রয়েছে।
প্যানেল হু