
ছবি: সংগৃহীত
২২ জুন, মার্কিন বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানে করে বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানে ওয়াশিংটন। এ সময় ইরান বিশেষ কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এর পরপরই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক শক্তিশালী বাংকার বাস্টার বোমা।
এবার সেই বিধ্বংসী বোমা ধ্বংসের কৌশল বাতলে দিল চীনের বিজ্ঞানীরা—যারা ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট চীনের সামরিক গবেষকদের বরাতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
বাংকার বাস্টার হলো এমন এক ধরনের বোমা যা বিমানের মধ্য থেকে নিক্ষেপের পর অপেক্ষাকৃত কম গতিতে ধেয়ে গেলেও, এর ওয়ারহেড বা বিস্ফোরক অংশ অত্যন্ত শক্তিশালী। পুরো বোমাটি মোড়ানো থাকে ইস্পাত বা আরমার-কোটিংয়ে। এর নাকের দিকটিকে এতটাই শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত করা হয় যে, কোনো দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দেশের পক্ষে একে আটকানো প্রায় অসম্ভব।
তবে চীনা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বোমাগুলোর দুর্বলতা লুকিয়ে আছে পাশের অংশে। বোমার নাকের দিকটি ইস্পাতে মোড়ানো হলেও এর পার্শ্বভাগে থাকে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পুরু পাতলা স্টিলের প্রলেপ। আর এই অংশে আঘাত করলেই বোমাটিকে ভূপাতিত করা সম্ভব।
এই গবেষণাটি করেছেন চুইসিংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল, যারা চীনের অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নরিনকোর নর্থ ওয়েস্ট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কর্মরত। তাদের গবেষণায় চীনের নিজস্ব কোনো অস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। বরং তারা সুইজারল্যান্ডের তৈরি বিমান বিধ্বংসী কামান ব্যবহার করে পরীক্ষাটি চালান।
এই কামান প্রতি ২ সেকেন্ডে ৩৬টি শেল ছুড়তে সক্ষম। গবেষণায় দেখা গেছে, ১২০০ মিটার দূরত্ব থেকে এই কামানের মাধ্যমে বাংকার বাস্টার বোমা ৪২% সম্ভাবনায় ধ্বংস করা সম্ভব।
তবে এর বাস্তব প্রয়োগে কিছু জটিলতা রয়েছে। গবেষকরা স্বীকার করেছেন, এই ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে আগে থেকেই বোমার নির্দিষ্ট গতিপথে লক্ষ্যবস্তু সেট করতে হয়। কিন্তু বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুতগতির এই বোমাগুলোর গতি ও পথ মুহূর্তেই বদলে যেতে পারে। এতে আঘাতের বিন্দু নির্ধারণে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চোখের পলকে এই প্রতিরোধ গড়তে চীনের কাছে অত্যাধুনিক রাডার ও কম্পিউটার প্রযুক্তি থাকলেও, বিশ্বের দুর্বল ও ছোট দেশগুলোর কাছে সেসব নেই। ফলে তাদের পক্ষে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ প্রায় অসম্ভব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যতের জন্য প্রযুক্তিগত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়ক হলেও, এর সফল প্রয়োগ নির্ভর করবে যুদ্ধের সামগ্রিক কৌশল ও বাস্তব পরিস্থিতির ওপর।
শেখ ফরিদ