ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শহরের ধুলোবালি থেকে ফুসফুস বাঁচাতে মাস্কের ধরন কেমন হওয়া উচিত?

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ জুলাই ২০২৫

শহরের ধুলোবালি থেকে ফুসফুস বাঁচাতে মাস্কের ধরন কেমন হওয়া উচিত?

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে শহরের বায়ুদূষণ অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি রাস্তায় চলছে, নির্মাণকাজ চলছে প্রায় সব জায়গায়, আবার কারখানা থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া ও ধুলো। এসবের ফলে আমাদের আশপাশের বাতাসে ভরপুর হয়ে আছে ধুলোবালি, ক্ষতিকর কণা ও গ্যাস। দীর্ঘদিন ধরে এসব দূষিত বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুসে নানা সমস্যা দেখা দেয়। হাঁচি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এমনকি ফুসফুস ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগও হতে পারে। এই অবস্থায় শহরের ধুলোবালি থেকে আমাদের ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে হলে মাস্ক ব্যবহার একটি কার্যকর পদ্ধতি। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন ধরনের মাস্ক পরা উচিত?

সাধারণভাবে কাপড়ের তৈরি মাস্ক বা একবার ব্যবহারযোগ্য সার্জিক্যাল মাস্ক শহরের ধুলাবালি থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না। কারণ এসব মাস্ক সাধারণত ছোট ছোট ধুলার কণা কিংবা বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র জীবাণু আটকাতে অক্ষম। এজন্য শহরের দূষিত বাতাসে চলাফেরা করার সময় এমন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, যা অন্তত ৯৫ শতাংশ বায়ুবাহিত কণা আটকাতে সক্ষম। এক্ষেত্রে এন৯৫ বা তার সমমানের মাস্ক সবচেয়ে উপযোগী।

এন৯৫ মাস্কের বিশেষত্ব হলো এটি ০.৩ মাইক্রোমিটার আকারের কণাও ছেঁকে ফেলতে পারে। শহরের বায়ুদূষণে এমন সূক্ষ্ম কণাই বেশি পরিমাণে থাকে, যেগুলো সাধারণ চোখে দেখা যায় না কিন্তু শ্বাসনালীর গভীরে প্রবেশ করে নানা ক্ষতি করতে পারে। এই ধরনের মাস্ক ফুসফুসকে রক্ষা করার পাশাপাশি এলার্জি, অ্যাজমা ও অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যার ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনে। এন৯৫ মাস্ক সাধারণত নাক ও মুখ ভালোভাবে ঢেকে রাখে এবং এর ফিটিং এমনভাবে তৈরি যে বাইরের বাতাস খুব একটা ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না।

তবে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেমন, মাস্কটি যেন মুখে সঠিকভাবে বসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি মাস্কের পাশ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে, তবে সেটি পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারবে না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ মাস্কটি অনেক দিন ধরে ব্যবহার করছে, ধুয়ে নিচ্ছে বা একই মাস্ক বহুবার ব্যবহার করছে। এতে মাস্কের কার্যকারিতা কমে যায়। সাধারণত এন৯৫ মাস্ক একবার ব্যবহারযোগ্য হলেও কিছু মাস্ক রয়েছে যা নির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার করে কিছুদিন ব্যবহার করা যায়। তবে সেগুলোর সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচর্যা করতে হয়।

বাচ্চা, বয়স্ক বা যাদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট বা হৃদরোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সাবধানতা দরকার। তাদের জন্য হালকা, আরামদায়ক এবং ভালো ফিল্টারযুক্ত মাস্ক বেছে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। তাই যাদের শারীরিক সমস্যা আছে, তারা মাস্ক ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

অনেক সময় বাজারে নকল বা নিম্নমানের মাস্ক বিক্রি হয়। এসব মাস্ক দেখতে এন৯৫-এর মতো হলেও আসলে তেমন কার্যকর নয়। তাই মাস্ক কেনার সময় যাচাই করে দেখা উচিত সেটি আসল কি না। মাস্কে সাধারণত ‘NIOSH’ সনদ থাকে, যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি সত্যিকারের এন৯৫। যদি সম্ভব হয়, নামকরা ব্র্যান্ডের মাস্ক কিনে ব্যবহার করাই ভালো।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—মাস্ক পরার পাশাপাশি শহরের ধুলোবালি থেকে সুরক্ষার জন্য কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন, খুব বেশি যানজটের সময় বাইরে না বের হওয়া, নির্মাণাধীন এলাকা এড়িয়ে চলা, গাছপালা লাগিয়ে নিজের চারপাশে একটু সবুজ পরিবেশ তৈরি করা। বাড়ি বা অফিসে এসে ভালোভাবে মুখ ও হাত ধুয়ে নেওয়া, সম্ভব হলে নাকের ভেতরটাও পরিষ্কার করা। দিনে প্রচুর পানি পান করলেও শরীরের ভেতর থেকে টক্সিন বের হয়ে আসে, যা দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

শহরের দূষণ পুরোপুরি ঠেকানো এখনকার দিনে কঠিন, কিন্তু কিছুটা সচেতন হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। সঠিক মানের মাস্ক ব্যবহার করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমাদের ফুসফুস সুস্থ রাখা সম্ভব। সুস্থ ফুসফুস মানেই দীর্ঘায়ু, প্রাণবন্ত জীবন। সুতরাং মাস্ক নির্বাচন এবং ব্যবহারে যেন কোনো অবহেলা না থাকে, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।

এম.কে.

×