
২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেছে একটি উচ্চাভিলাষী পরিবহন প্রকল্প—নেভাদার লাস ভেগাস থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার র্যাঞ্চো কুকামোঙ্গা পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণ। প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য এই রেললাইনটি দেশের প্রথম সত্যিকারের হাই-স্পিড প্যাসেঞ্জার রেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিকল্পিত রুট ও স্টেশন
রেলপথটি হবে ৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ, যার ৯৬ শতাংশই চলবে ইন্টারস্টেট ১৫ হাইওয়ের মাঝ বরাবর। রুটটি শুরু হবে লাস ভেগাস থেকে, যেখানে একটি স্টেশন থাকবে ভেগাস স্ট্রিপের কাছাকাছি। পরবর্তী স্টেশন হবে অ্যাপল ভ্যালির ভিক্টর ভ্যালি, এবং তৃতীয় স্টেশন হেস্পেরিয়া। চূড়ান্ত গন্তব্য হবে র্যাঞ্চো কুকামোঙ্গা স্টেশন, যা অন্টারিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকট এবং মেট্রোলিংকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
ভ্রমণ সময় ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
বর্তমানে গাড়িতে লাস ভেগাস থেকে র্যাঞ্চো কুকামোঙ্গা পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিট। কিন্তু এই হাই-স্পিড ট্রেনের মাধ্যমে একই যাত্রা মাত্র ২ ঘন্টা ১০ মিনিটে সম্পন্ন হবে। ট্রেন চলবে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ মাইল গতিতে এবং এটি হবে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ও শূন্য নির্গমনবিশিষ্ট। শক্তি আসবে নেভাদার সৌরবিদ্যুৎ খামার থেকে, যা কার্বন নিঃসরণ বছরে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন কমাতে সহায়ক হবে।
ইতিহাস ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান
প্রকল্পটির মূল ধারণা আসে ১৯৯০-এর দশকে, যখন লাস ভেগাসকে অরেঞ্জ কাউন্টির সঙ্গে ম্যাগলেভ ট্রেনের মাধ্যমে যুক্ত করার প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু তহবিল সংকট ও পরিবেশগত ছাড়পত্র না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ২০১৮ সালে ফ্লোরিডাভিত্তিক আন্তঃনগর রেল কোম্পানি ব্রাইটলাইন এক্সপ্রেসওয়েস্ট অধিগ্রহণ করে এবং ২০১৯ সালে এটি ‘ব্রাইটলাইন ওয়েস্ট’ নামে পুনঃপ্রবর্তন করে।
বাজেট ও অর্থায়ন
১২ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার আসবে বেসরকারি অর্থায়নে। বাকি ৩ বিলিয়ন বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার, বাইডেন প্রশাসনের দ্বিদলীয় অবকাঠামো বিলের আওতায়।
নির্মাণ কাজের অগ্রগতি
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমি ও মাউন্টেন পাস অঞ্চলে নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। প্রায় ১৬০টিরও বেশি অবকাঠামো, সেতু ও ভায়াডাক্ট তৈরি হবে। ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৯,০০০ বর্গমিটার আকারের একটি সুবিধা গড়ে তোলা হবে স্লোয়ানে, নেভাদায়।
ট্রেনের অভ্যন্তরীণ সুবিধা
সাত কামরার ট্রেনগুলোতে থাকবে স্টাইলিশ আসন, বিনামূল্যে ওয়াইফাই, প্রিমিয়াম সিটিং ব্যবস্থা এবং একটি পার্টি কারসহ বার সুবিধা। ট্রেনগুলি নির্মাণ করবে জার্মানির সিমেন্স মোবিলিটি, যা নিউইয়র্কের আপস্টেট অঞ্চলে একটি কারখানা স্থাপন করছে।
আইনি চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ফরাসি কোম্পানি অ্যালস্টম ‘বাই আমেরিকা অ্যাক্ট’ লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ফেডারেল মামলা দায়ের করেছে। তবে প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পূর্ণ পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে এবং ইউনিয়ন শ্রমিকদের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ চলছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে তা ২০২৮ সালের অলিম্পিক পর্যটকদের যাতায়াতে বিরাট সুবিধা এনে দেবে। অর্থনীতিতেও এর প্রভাব বিশাল হবে—আসবে কোটি কোটি ডলার রাজস্ব ও কর আয়। তৈরি হবে ৩৫ হাজার নির্মাণ ও ১ হাজার স্থায়ী কর্মসংস্থান। ভবিষ্যতে প্রকল্পটি এলএ ইউনিয়ন স্টেশন, পামডেল এমনকি সান ফ্রান্সিসকো পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশবান্ধব দ্রুত যাত্রী পরিবহনের এক নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে। সময়মতো শেষ হলে এটি হতে পারে দেশের প্রথম সফল হাই-স্পিড রেলপথ—যা বদলে দেবে আমেরিকার যাতায়াত ব্যবস্থা ও নগর সংযোগের ধরন।
রিফাত