ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

চীনে সন্তানপ্রতি বছরে ৪৫ হাজার টাকা ভাতা!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৯ জুলাই ২০২৫

চীনে সন্তানপ্রতি বছরে ৪৫ হাজার টাকা ভাতা!

ছবি: সংগৃহীত

চীনে জন্মহার আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এক নতুন জনসংখ্যাগত সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা ‘এক সন্তান নীতি’র দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবার বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। জন্মহার বাড়াতে এবং তরুণদের পরিবার গঠনে উৎসাহিত করতে তারা চালু করতে যাচ্ছে একটি জাতীয় শিশুভাতা নীতি। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই নীতি কার্যকর হবে, যার আওতায় তিন বছরের কম বয়সী প্রতিটি সন্তানের জন্য প্রতি বছর পরিবারগুলো পাবে ৩,৬০০ ইউয়ান, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। 

এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের আর্থিক চাপ কমানো এবং ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া জন্মহার সামলানো। তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ায় জন্মহার নেমে এসেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, এই নীতি একটি “গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে কাজ করবে এবং এটি পরিবারগুলোর উপর আর্থিক চাপ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

২০২৪ সালে চীনের জনসংখ্যা টানা তৃতীয় বছরের মতো হ্রাস পেয়েছে। তরুণদের সন্তান নেওয়ার আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ—চাকরির অনিশ্চয়তা, উচ্চ শিক্ষাব্যয়, এবং দ্রুত নগরায়ন। এই প্রেক্ষাপটে সরকার আশাবাদী, শিশু লালন-পালনে সরাসরি আর্থিক সহায়তা মানুষকে সন্তান নিতে উৎসাহিত করবে।

ভাতা সংক্রান্ত নীতির আওতায় প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সন্তান—সবার ক্ষেত্রেই ভাতা সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারির পর যেসব শিশু জন্ম নেবে, তারা পুরো তিন বছরের জন্য সর্বোচ্চ ১০,৮০০ ইউয়ান ভাতা পাবে। 

এই সুবিধা প্রায় ২ কোটি পরিবারের উপকারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই ভাতা ব্যক্তিগত আয়কর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে এবং পরিবার বা ব্যক্তির বার্ষিক আয় হিসেবেও গণ্য হবে না। ফলে ন্যূনতম জীবনযাত্রা ভাতা বা অন্যান্য সামাজিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি কোনো প্রভাব ফেলবে না।

২০২৫ সালের আগস্টের শেষ নাগাদ ভাতা পাওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। স্থানীয় সরকারগুলো ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করতে কাজ শুরু করেছে। অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই আবেদন করা যাবে এবং প্রক্রিয়াটি শিশুর নিবন্ধিত ঠিকানা অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিটি ভালো উদ্দেশ্যে গৃহীত হলেও একে যথেষ্ট মনে করছেন না। ক্যাপিটাল ইকোনমিক্স-এর চায়না ইকোনমিস্ট জিচুন হুয়াং বলেন, “এই ভাতা তাৎক্ষণিকভাবে জন্মহার বাড়াতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না, তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Citi Research জানিয়েছে, এই নীতির বরাদ্দ ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ১১৭ বিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছাতে পারে। তবে তারা এটিকে জন্মহার বাড়ানোর চেয়ে অর্থনৈতিক প্রণোদনা হিসেবেই বেশি কার্যকর মনে করছে।

চীনের এই নতুন পরিকল্পনাটি জনসংখ্যা সংকট মোকাবেলায় একটি সাহসী প্রচেষ্টা। যদিও অনেকে মনে করছেন, এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে মানুষের সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে নাটকীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে জনকল্যাণমূলক নীতির ভিত্তি তৈরি করতে পারে। 

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×