
ছবি: সংগৃহীত
আকাশে গর্জে উঠছে যুদ্ধবিমান, আর মাটিতে কাঁদছে ক্ষুধার্ত শিশুরা—এটাই আজকের গাজার নির্মম বাস্তবতা। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে এক অদ্ভুত প্রহসন। ইসরাইলের মিত্ররা একদিকে গাজার জনগণের জন্য চাল-ডাল-ওষুধের হাহাকার দেখছে, আর অন্যদিকে আকাশ থেকে ফেলছে কিছু খাবারের প্যাকেট। এই মানবিক সহায়তার আড়ালে চলছে নিষ্ঠুর ও রাজনৈতিক এক নাটক। সম্প্রতি জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে গাজায় এয়ারড্রপ অভিযান চালিয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক শাখা সিওজিএটি জানিয়েছে, সোমবার উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় মোট ২০টি প্যালেট ফেলা হয়েছে। তাদের দাবি, এটি নাকি মানবিক সংকট মোকাবেলার প্রচেষ্টা। কিন্তু গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, একই দিনে মাত্র ৭৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে, যা দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জন্য অপ্রতুল। আর যেসব সহায়তা আকাশ থেকে ফেলা হয়েছে, তার বেশিরভাগই পড়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা সেনা পোস্টের কাছাকাছি—যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছাতে পারে না। এমনকি এই প্যালেট পড়ে অনেক সময় জনবহুল এলাকায় প্রাণহানিও ঘটেছে। দেখা গেছে সহায়তার লুটপাটও ঘটেছে ইসরাইলি বাহিনীর সামনেই।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই এয়ারড্রপ মানবিক সহায়তা নয় বরং দখলদারদের প্রচারণা চালানোর একটি হাতিয়ার। তাদের ভাষায়, এটি মূলত বিশ্ববাসীর চোখে ধুলো দেওয়ার এক কৌশল। গোপন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন দফা বিমান থেকে ফেলা সব পণ্যের পরিমাণ মিলে দু’টি ট্রাকের মালামালও হয় না। অথচ প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবার বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য ও ওষুধের অপেক্ষায় থাকে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এই কার্যক্রমকে সরাসরি ‘নিষ্ঠুর এয়ার শো’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এসব প্রতীকী সহায়তা শুধু বিশ্ববাসীর চোখে কিছু করা হচ্ছে এমন দেখানোর চেষ্টা, বাস্তবে সীমান্ত বন্ধই রয়ে গেছে। অভাব রয়ে গেছে ওষুধ, শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির—সবকিছুতেই। তারা স্পষ্ট বলেছে, একমাত্র সমাধান হলো—অবরোধ তুলে নেওয়া, সীমান্ত খুলে দেওয়া, এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতীকী সাহায্য বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার পথ মাত্র। এতে দখলদারিত্ব আরও পোক্ত হচ্ছে। গাজার আকাশে প্রতিদিন উড়ে চলেছে সহায়তা-প্যাকেটবাহী বিমান, কিন্তু নিচে কাতর জনগণের ভাগ্য বদলাচ্ছে না—বরং প্রতিটি প্যাকেট যেন তাদের বুকে চেপে বসা এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার নতুন অধ্যায় হয়ে উঠছে।
শেখ ফরিদ