ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

যেসব খাবার নিঃশব্দে ধ্বংস করছে আপনার কিডনি,প্রতিদিন খাচ্ছেন অজান্তেই! 

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ২৯ জুলাই ২০২৫

যেসব খাবার নিঃশব্দে ধ্বংস করছে আপনার কিডনি,প্রতিদিন খাচ্ছেন অজান্তেই! 

আমাদের শরীরের নীরব রক্ষক হচ্ছে কিডনি। প্রতিনিয়ত শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ছেঁকে ফেলে, দেহের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিনই কিছু ভুল খাবার খেয়ে চলেন, তা হলে অজান্তেই কিডনির উপর বিরাট চাপ তৈরি হতে পারে।

কেবল মদ বা অতিরিক্ত নুন নয়, বরং আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লুকিয়ে থাকা কিছু খাবারই হতে পারে ভবিষ্যতের কিডনি সমস্যার মূল কারণ। ভয়ংকর বিষয় হলো, কিডনি ড্যামেজের প্রাথমিক ধাপগুলোতে কোনো লক্ষণ না-ও দেখা যেতে পারে। তাই, আপনি যদি কিডনি সুস্থ রাখতে সচেতন হতে চান, তাহলে এখনই জেনে নিন কোন খাবারগুলো কিডনির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর আর কীভাবে সেগুলোর বিকল্প বেছে নেবেন।

প্রক্রিয়াজাত নোনতা খাবার
নুন কিডনি স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান শত্রু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যানের স্যুপ, ফ্রোজেন মিল, চিপস, প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন ডেলি মিট, বেকন), রেস্টুরেন্টের খাবার, এমনকি সস ও সালাদ ড্রেসিংয়ের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে বিপজ্জনক মাত্রার লবণ। অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনিকে পানি ধরে রাখতে বাধ্য করে, ফলে রক্তচাপ বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চিনি ও কোলা জাতীয় পানীয়
চিনি ও কোলার সংমিশ্রণ কিডনির জন্য ভয়াবহ। বিশেষ করে ‘ডার্ক’ কোলা জাতীয় পানীয়তে থাকে উচ্চমাত্রার ফসফরাস, যা দুর্বল কিডনি সহজে প্রক্রিয়া করতে পারে না। ফলে রক্তনালী ও হাড়ের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এছাড়া অতিরিক্ত চিনি স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় যা দুটোই কিডনি রোগের প্রধান কারণ।

ফাস্ট ফুড ও প্যাকেটজাত ডিনার
বার্গার, ফ্রাই, পিজা কিংবা ইনস্ট্যান্ট নুডলস এগুলো শুধুমাত্র মুখরোচকই নয়, বরং সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং উচ্চমাত্রার ফসফরাস ও পটাসিয়ামেও ভরপুর। এসব উপাদান কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, বিশেষত যখন শরীরে এদের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

উচ্চ ফসফরাসযুক্ত খাবার
ফসফরাস শরীরে জমে গেলে এটি হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শুধু কোলাতে নয়, ফসফরাস পাওয়া যায় প্রক্রিয়াজাত চিজ, দুগ্ধজাত খাবার, বিনস, বাদাম, হোল গ্রেইন ব্রেড এবং যেসব খাবারে “phos-” লেখা থাকে, সেগুলোর অনেকগুলোতেই।

অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন
লাল মাংস, মুরগি, ডিম ও চিজে থাকা অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। যারা কিডনি সমস্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন কিংবা শুরুর পর্যায়ের ক্রনিক কিডনি ডিজিজে (CKD) ভুগছেন, তাদের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর। প্রোটিন প্রয়োজন, কিন্তু দেহের চাহিদার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার
স্বাভাবিক কিডনি থাকলে পটাসিয়াম উপকারী হলেও দুর্বল কিডনির ক্ষেত্রে এটি শরীর থেকে সহজে বের হতে পারে না। ফলে পেশি ও হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কলা, কমলা, আলু, টমেটো, অ্যাভোকাডো এবং কিছু ‘হোল হুইট’ ব্রেডেও রয়েছে লুকানো পটাসিয়াম।

অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার
যেকোনো প্যাকেটজাত, ইনস্ট্যান্ট বা ‘মিনিটে তৈরি’ খাবারে থাকে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, ফসফরাস, ট্রান্স ফ্যাট ও AGEs (Advanced Glycation End Products) যেগুলো উচ্চ তাপে রান্না করা হলে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন গবেষণায় কিডনি ক্ষতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। যত বেশি আপনি এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার খাচ্ছেন, ততই বাড়ছে কিডনি সমস্যার ঝুঁকি।


কিডনি সমস্যা ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে অনেক সময় তা বোঝার আগেই বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই আজ থেকেই সচেতন হন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর, প্রাকৃতিক খাবার রাখুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। কিডনি ভালো তো শরীর ভালো এই সহজ সত্যটা ভুলে গেলে চলবে না।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/munu38ms

আফরোজা

×