ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মণিরামপুরে ভুয়া মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রতারণা: একই ছাদের নিচে চলছে মেডিকেল ও ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ!

তাসনিমুল হাসান প্রান্ত, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মণিরামপুর, যশোর

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

মণিরামপুরে ভুয়া মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রতারণা: একই ছাদের নিচে চলছে মেডিকেল ও ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ!

ছবি: জনকণ্ঠ

যশোরের মণিরামপুরে আবারও অবৈধ মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে। ‘আপো হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’-এর পর এবার রাজগঞ্জ বাজারে ধরা পড়েছে আরেকটি কথিত মিনি মেডিকেল কলেজ, যার নাম ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’।

প্রতিষ্ঠানটির মূল কার্যালয় ছিল কেশবপুরে, তবে সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আশ্চর্যজনকভাবে বন্ধ ঘোষণার পরও রাজগঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির শাখা এখনো সচল রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন ডিএম মনিরুজ্জামান মনির, যিনি নিজেকে ডাক্তার দাবি করলেও তার কোনো এমবিবিএস বা সরকারি স্বীকৃত চিকিৎসা ডিগ্রি নেই। তিনি নিজেই শিক্ষকের ভূমিকায় ছাত্রদের ক্লাস করাচ্ছেন—যেখানে এসব প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র প্রফেশনাল এমবিবিএস বা অনুমোদিত প্রশিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা। রাজগঞ্জে এই কথিত ইনস্টিটিউটে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে, ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার, ডেন্টাল কেয়ার, ল্যাব টেকনোলজি, পল্লী চিকিৎসা, ইউনানী মেডিসিন প্র্যাকটিস, ফার্মেসি, পশু চিকিৎসক, ভূমি জরিপ, এমনকি ফ্রিল্যান্সিং কোর্সেও!

প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত কোনো ম্যাটস্-এর আওতাভুক্ত নয় এবং এগুলোর কোনোটিই বৈধ নয় বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মনির বলেন, “প্রধান কার্যালয় বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে সাইনবোর্ড সরানো হয়নি। রাজগঞ্জে কেবল ‘নার্সিং’ ও ‘পল্লী চিকিৎসা’ কোর্স চালু আছে।” তিনি দাবি করেন, ঢাকার সচিবালয়ের এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে বগুড়ার সিটি ফাউন্ডেশন থেকে অনুমতি নিয়েছেন, যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এমন অনুমতির কোনো প্রমাণ নেই।

ডিএমএফ ডিগ্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে “ডিএমএফ ডাক্তার” পরিচয় দিলেও কোন ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তা বলতে পারেননি।

মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়াজ মাখদুম বলেন, “বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

যশোর সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, “জেলায় কোনো অবৈধ মেডিকেল ইনস্টিটিউট চালাতে দেওয়া হবে না। রাজগঞ্জের এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সহজ-সরল গ্রামীণ মানুষদের টার্গেট করে মনির প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন। ভুয়া প্রশিক্ষণ সনদ ও চেম্বারে রোগী দেখে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু তাই নয়, রাজগঞ্জ এলাকায় মাঠপর্যায়ে একাধিক কর্মী নিয়োগ দিয়ে প্রতারণার নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করছেন।

আবির

আরো পড়ুন  

×