
ছবি: প্রতীকী
আমরা অনেকেই সময় কাটানোর জন্য বা কৌতূহলবশত নিজের নাম গুগলে সার্চ করি। কখনও নিছক মজা করে, আবার কখনও প্রয়োজনেও করি এই কাজটা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি গুগলে নিজের নাম লিখে কী দেখেন? যেটা দেখা যায়, সেটা কি আপনি আশা করেছিলেন? না কি অপ্রত্যাশিত কিছু?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কে, আপনি কী করেন, আর আপনি কতটা অনলাইনে সক্রিয়। যদি আপনি শিক্ষক, সাংবাদিক, উদ্যোক্তা, লেখক কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, তাহলে আপনার নাম সার্চ দিলে গুগল কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য দেখাতে পারে। হতে পারে সেটা আপনার ফেসবুক প্রোফাইল, লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্ট, বা হয়তো কোনো নিউজ রিপোর্ট, যেখানে আপনার নাম এসেছে। কখনও কখনও, আপনার পুরনো ব্লগ বা কলেজ লাইফে লেখা কোনো কবিতা পর্যন্ত উঠে আসতে পারে।
অনেকে আবার নিজের নাম লিখে খুঁজে পান না কোনো উল্লেখযোগ্য কিছু। গুগল কিছু অজানা মানুষের নাম দেখায়, যাদের নাম আপনার নামের সঙ্গে মিলে যায়। এতে হয়তো হতাশা আসতে পারে, আবার অনেকে স্বস্তিও পান—এটা দেখে যে তাদের নাম অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েনি। কারও কারও কাছে এটা নিরাপত্তা বিষয়ক স্বস্তির মতো, আবার কারও কাছে এটা পরিচিতির অভাব।
গুগলে নিজের নাম খোঁজার বিষয়টি অনেক সময় নিজের ডিজিটাল পরিচয় যাচাই করার একটি উপায়ও। ধরুন, আপনি একজন চাকরিপ্রার্থী। আপনি সিভিতে নিজের নাম লিখলেন, এবং নিয়োগকর্তা সেটা গুগলে সার্চ করলেন। তখন যদি নেতিবাচক কিছু উঠে আসে—যেমন বিতর্কিত মন্তব্য, পুরনো কোনো অপ্রীতিকর ছবি বা ভুল তথ্য—তাহলে সেটি আপনার ক্ষতিও করতে পারে। আবার আপনি যদি ভালো কিছু কাজ করে থাকেন, যেমন কোনো আর্টিকেল লিখে থাকেন, বক্তৃতা দিয়ে থাকেন বা স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে গুগল সেই ভালো কাজগুলো দেখিয়ে আপনার ইমেজ তৈরি করতে সাহায্য করবে।
এখন প্রশ্ন আসে, আমরা কীভাবে গুগলে নিজের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করব? প্রথমত, আপনি চাইলে নিজেই কিছু প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন—যেমন লিঙ্কডইন, মিডিয়াম, ফেসবুক, টুইটার, বা নিজের একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট। এসব জায়গায় নিজের পরিচয়, কাজের অভিজ্ঞতা, এবং দক্ষতা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন। এরপর ধীরে ধীরে গুগল সেই কনটেন্টগুলো ইনডেক্স করতে শুরু করবে। ফলাফল হিসেবে, যখন কেউ আপনার নাম সার্চ করবে, তখন সেই ভালো এবং তথ্যবহুল পেজগুলোই আগে আসবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গোপনীয়তা। আপনি যদি না চান ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য গুগলে প্রকাশ হোক, তাহলে সেটা অনলাইনে আপলোড করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ ফেসবুকে কোনো ছবি বা পোস্ট দিয়েছেন, যেটা পরে গুগলে উঠে আসে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষ সেটি দেখে ফেলে।
গুগল নাম সার্চ করে আমরা আরও অনেক কিছু শিখতেও পারি। যেমন, নিজের অনলাইন ফুডপ্রিন্ট কতটা ছড়িয়ে আছে, কে কোথায় আপনার নাম উল্লেখ করেছে, বা কোনো ছবি আপনার নামে গুগলে ছড়িয়ে পড়েছে কি না। এর মাধ্যমে আপনি নিজের অনলাইন নিরাপত্তা এবং ইমেজ দুই নিয়েই সচেতন হতে পারেন।
গুগলে নিজের নাম সার্চ করা শুধু কৌতূহল মেটানোর বিষয় নয়, এটা এখন নিজের ডিজিটাল ছায়া বা পরিচয় যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আপনি যদি সচেতন থাকেন এবং নিজের ইমেজ ভালোভাবে গড়ে তুলতে চান, তাহলে মাঝে মাঝে নিজের নাম গুগলে খুঁজে দেখা খুবই দরকার। এতে আপনি নিজেকে নতুন চোখে দেখতে পারবেন, আর জানতে পারবেন— এই বিশাল ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।
এম.কে.