
ছবি: সংগৃহীত
টোকিও শহরের ব্যস্ততম রেলস্টেশন শিবুয়া। ভিড়ের স্রোত থেমে থাকে না এক মুহূর্তের জন্যও। কিন্তু এই স্টেশনের একটি নির্দিষ্ট কোণে প্রায় দশ বছর ধরে প্রতিদিন দেখা মিলত এক সোনালি আকিতা কুকুরের। তার নাম হাচিকো। চোখে ভর করে থাকে অপেক্ষা, যেন প্রতিদিন কারও ফিরে আসার আশা। বড় বড় চোখে সে তাকিয়ে থাকে স্টেশনের ভেতরের দিকে, যেন কাউকে খুঁজছে। পথচারীরা তাকে দেখে মৃদু হেসে পাশ কাটিয়ে যায়। কেউ কেউ খাবার দেয়, কেউবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কিন্তু কুকুরটির চোখে শুধু একটিই আশা – “মালিক ফিরবে, আমি তাকে বাড়ি নিয়ে যাব।”
গল্পের শুরুটা ১৯২৪ সালে, একদিন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিদেসাবুরো উয়েনো গ্রামে গিয়ে ছোট্ট একটি আকিতা কুকুরছানা নিয়ে আসেন। নাম দেন হাচিকো। সেই থেকে শুরু হয় এক অসাধারণ বন্ধুত্ব। মালিকের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠে হাচিকো।
প্রতিদিন সকালবেলা মালিকের সাথে শিবুয়া স্টেশন পর্যন্ত যায় হাচিকো। মালিক ট্রেনে উঠে গেলে সে চুপচাপ বাড়ি ফিরে আসে। বিকেলে আবার ঠিক সময়ে চলে আসে স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে মালিককে দেখে খুশিতে লেজ নাড়তে নাড়তে একসাথে বাড়ি ফিরে যায় তারা। স্টেশনের কর্মীরা তখন থেকেই হাচিকোকে চিনত।
হঠাৎ ঝড় ১৯২৫ সালের ২১ মে। সেদিনও হাচিকো ঠিক আগের মতো স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। ট্রেন এল, মানুষজন নেমে গেল। কিন্তু তার প্রিয় মানুষটি আর ফিরে এলেন না। অধ্যাপক উয়েনো সেদিন অফিসেই হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যান। কেউ হাচিকোকে এই খবর বোঝাতে পারেনি। সে ভেবেছিল, হয়তো কাল ফিরবেন।
সেই দিন থেকে প্রতিদিন বিকেলে হাচিকো স্টেশনে আসে। দিন যায়, মাস যায়, বছরও পার হয়, কিন্তু হাচিকো তার অভ্যাস ছাড়ে না। পুরো ৯ বছর ৯ মাস ১৫ দিন ধরে সে ঠিক একই জায়গায় বসে থেকেছে। মানুষ তাকে খাবার দিত, সান্ত্বনা দিত, কিন্তু হাচিকোর চোখে ছিল একটাই প্রশ্ন “আমার মানুষটা ফিরছে না কেন?”
১৯৩৫ সালের ৮ মার্চ। সেই দিনের সকালেও হাচিকো স্টেশনের পাশে ছিল। কিন্তু শরীর আর সইল না। শিবুয়া স্টেশনের ঠিক পাশেই সে চিরদিনের জন্য চোখ বন্ধ করে।
যেদিন সে মারা যায়, হাজার হাজার মানুষ এসে চোখের পানি ফেলেছিল। কারণ সবাই জানত এ এক ভালোবাসার গল্প, যার শেষ নেই।
১৯৩৪ সালেই হাচিকোর সম্মানে শিবুয়া স্টেশনের সামনে একটি ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়। আজও সেটি দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে। হাচিকো শিখিয়েছে, ভালোবাসা এবং বিশ্বস্ততা মৃত্যুর পরও হারিয়ে যায় না। আজ সেই হাচিকোর গল্পই মানুষকে শোনায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর অবিচল বিশ্বস্ততার কথা।
মুমু ২