ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকরা পরিণত হয়েছিলেন জাতি রক্ষার কারিগরে

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫৫, ২৯ জুলাই ২০২৫

জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকরা পরিণত হয়েছিলেন জাতি রক্ষার কারিগরে

যেখানে ছাত্ররা রাস্তায়, শ্রেণিকক্ষে, শহীদ মিনারে লড়াই করছিল নিজেদের আত্মপরিচয়ের জন্য সেখানে কিছু শিক্ষক কেবল পাঠদাতা হয়ে থাকেননি। তারা হয়ে উঠেছিলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর, ন্যায়ের পক্ষের ঘোষণা। ২০২৪ সালের ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ কিংবা এর আগে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো সময়গুলো সাক্ষ্য দেয়, কীভাবে শিক্ষকতার চেয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে শিক্ষকের ভূমিকা।

জাতি গঠনের কারিগর যখন জাতি রক্ষার দায়িত্ব নেন, তখন তা শুধু আন্দোলন নয় তা হয়ে ওঠে ইতিহাস। যে ইতিহাস কথা বলে মানুষের ভেতরের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে, প্রজন্মের আত্মপরিচয় গড়তে এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে।

জুলাই ২০২৪। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন যখন ক্রমেই কঠোর হচ্ছে, তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী দাঁড়ালেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার বেদীতে দাঁড়িয়ে তার দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু আবেগময় বক্তব্য দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
 

তাঁর কণ্ঠে ছিল তীব্র প্রতিবাদ, অথচ গভীর ভালবাসা। অশ্রুসজল বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনেককেই নাড়া দেয় যাঁরা তখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন।
তাঁর উচ্চারণ শুধু শিক্ষার্থীদের সাহস দেয়নি, বরং এই কথাগুলো সমাজের বহু স্তরে ছড়িয়ে দেয় প্রতিবাদের আগুন। এমন কণ্ঠই তখন হয়ে উঠেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রকার নৈতিক নির্দেশনা।

 

শুধু ২০২৪ নয়, এরও আগে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক সায়মা ফেরদৌস আলোচনায় আসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি অকপটে ছাত্রদের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছিলেন।
 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাবশালী শিক্ষিকা হিসেবে তার অবস্থান ছিল সাহসিকতাপূর্ণ। তিনি শুধু সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে থেমে থাকেননি, আন্দোলনের মাঠেও সরব ভূমিকা পালন করেছেন। তার অবস্থান ছিল অটল ন্যায় ও যুক্তির পক্ষে, পক্ষপাতহীন এবং দ্বিধাহীন।
সায়মা ফেরদৌসের মতো একজন নারীর এই সাহসিকতা তখন নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছিল নারী শিক্ষার্থীদেরও। একটি প্রজন্ম তাকে দেখেছিল আদর্শবান শিক্ষকের প্রতিকৃতি হিসেবে।

শিক্ষক মানে কেবল পাঠদান নয় যখন সময় আসে, তখন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোই শিক্ষকের প্রকৃত পরিচয়। গোলাম রব্বানী বা সায়মা ফেরদৌসের মতো শিক্ষকরা সে দায়িত্ব পালন করেছেন অকপটে।

এমন সময়ে, যখন অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন বা নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে দূরে ছিলেন, তখন এই শিক্ষকেরা ছিলেন আলোর দিশারি। তাদের ভূমিকা শিক্ষার্থীদের মনে সাহস ছড়িয়েছে, সাহস জুগিয়েছে, এবং তৈরি করেছে নতুন এক বিশ্বাস শিক্ষকও হতে পারেন বিপ্লবের প্রেরণা।
 

বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রআন্দোলনের ভূমিকাই বরাবর মুখ্য, কিন্তু সে আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে যখন কিছু শিক্ষক যুক্ত হন, তখন তা হয়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী। আজকের প্রজন্ম এসব শিক্ষকদের স্মরণ করছে কৃতজ্ঞতায়, শ্রদ্ধায় এবং অহংকারে।

আফরোজা

×