
ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো শোনালেও, এটি বাস্তব অনুসন্ধান—আমাদের ছায়াপথে এমন কিছু তারার সন্ধান মিলেছে যেগুলো হয়তো তথাকথিত ‘ডাইসন স্ফিয়ার’-এর আশ্রয়ে রয়েছে। যুক্তরাজ্য-আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রিম্যান ডাইসনের এই তত্ত্ব অনুসারে, কোনো উন্নত সভ্যতা তাদের নক্ষত্রকে ঘিরে আয়নাযুক্ত বা সৌর প্যানেলে তৈরি এক বিশাল খোল তৈরি করে তাদের প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণ করতে পারে।
১৯৬০ সালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে ডাইসন বলেছিলেন, ‘শিল্পোন্নত যেকোনো বুদ্ধিমান প্রজাতি তাদের নক্ষত্রকে ঘিরে কৃত্রিম বাসস্থান তৈরি করতে পারে।’ এই তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত ‘ডাইসন স্ফিয়ার’ ধারণাটি এলিয়েন সভ্যতার খোঁজে এক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে উদ্বুদ্ধ করে।
সম্প্রতি সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পাঁচ মিলিয়ন তারার ইনফ্রারেড বিকিরণ বিশ্লেষণ করে সাতটি তারাকে চিহ্নিত করেছেন, যেগুলোর ইনফ্রারেড বিকিরণের পেছনে কোনো স্বাভাবিক ব্যাখ্যা মেলেনি। গবেষক মাতিয়াস সুয়াজো জানান, ‘এই সাতটি উৎস ডাইসন স্ফিয়ারের মতো আচরণ করছে, তবে আমরা নিশ্চিত নই—এগুলো ডাইসন স্ফিয়ার না অন্য কোনো প্রাকৃতিক কারণেও হতে পারে।’
আলোচনার কেন্দ্রে সাতটি লাল বামন তারা
এই তারাগুলো সবই আমাদের ছায়াপথের লাল বামন তারা, যেগুলো সূর্যের চেয়ে ছোট ও কম উজ্জ্বল। ডাইসন স্ফিয়ার থাকলে নক্ষত্রের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা পদার্থের কারণে তা অতিরিক্ত ইনফ্রারেড বিকিরণ সৃষ্টি করে, যা বিজ্ঞানীরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
তবে অন্য সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—পেছনের কোনো গ্যালাক্সির অস্বাভাবিক সমন্বয়, গ্রহের সংঘর্ষজনিত ধূলিকণা, কিংবা তরুণ তারার চারপাশের প্রাকৃতিক ধ্বংসাবশেষ।
এই গবেষণার জন্য ব্যবহৃত তথ্য এসেছে নাসার WISE, ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থার Gaia এবং 2MASS ইনফ্রারেড সার্ভের মতো আন্তর্জাতিক দূরবীক্ষণ প্রকল্প থেকে। তবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন, বিশেষ করে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে।
এমনকি পুরো বৃহস্পতি গ্রহও যথেষ্ট নয়
ডাইসন নিজেই বলেছিলেন, এ ধরনের একটি স্ফিয়ার বানাতে আমাদের গোটা বৃহস্পতি গ্রহকেও খুলে ফেলতে হতে পারে। ফলে বাস্তবায়ন মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব, কিন্তু এলিয়েনদের জন্য নয়।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেসন রাইট বলেন, ‘এই গবেষণার গুরুত্ব হলো এটি দেখিয়েছে, আমাদের ছায়াপথে ডাইসন স্ফিয়ার সম্ভবত বিরল—যা অনেক বিজ্ঞানীর বিপরীত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানায়।’
তবে অন্য গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এই সাতটি তারার ইনফ্রারেড বিকিরণ আসলে গ্যালাক্সির গাঢ় ধূলি-আচ্ছাদিত অঞ্চলও (Hot Dust-Obscured Galaxies) হতে পারে। এদের সত্যতা যাচাই করতে জেমস ওয়েবের মতো দূরবীক্ষণ প্রয়োজন।
অবশেষে, উত্তরের খোঁজেই অন্বেষণ
ফ্রিম্যান ডাইসন ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তাঁর অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞানীরা এখনো অনুসন্ধান করে চলেছেন। ডাইসনের ছেলে প্রযুক্তি লেখক জর্জ ডাইসন বলেন, ‘আমার বাবা হয়তো এখনো এ বিষয়ে সন্দিহান থাকতেন। তবে নতুন, অজানা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা আবিষ্কারের সুযোগই ছিল তাঁর মূল প্রেরণা।’
এমন এক অনুসন্ধান, যেখানে কল্পবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, দার্শনিক প্রশ্ন এবং ধর্মীয় কৌতূহল একসাথে মিলেছে—সেই পথে এক সাহসী পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে ডাইসন স্ফিয়ার অনুসন্ধান।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব