
মানবদেহে কিডনি ও গলব্লাডারে পাথর হওয়া দেখতে একরকম মনে হলেও, বাস্তবে এগুলো দুটি ভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনির পাথর কিডনিতে তৈরি হয়, অন্যদিকে গলব্লাডার বা পিত্তথলির পাথর গলব্লাডারে গঠিত হয়। কিডনি মূলত রক্ত পরিশোধন করে ও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। আর গলব্লাডার যকৃতের নিচে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ, যা পিত্তরস উৎপন্ন করে এবং চর্বি হজমে সহায়তা করে।
এই দুই ধরনের পাথরের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসার পদ্ধতিও ভিন্ন। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো চিনে রাখতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয় এবং জটিলতাও এড়ানো যায়।
কিডনির পাথর ও গলব্লাডারের পাথর: মূল পার্থক্য কী?
যদিও দুটি অবস্থাতেই শরীরে কঠিন, পাথর সদৃশ বস্তু তৈরি হয়, তবে কিডনি ও গলব্লাডারের পাথরের মধ্যে মূল পার্থক্য রয়েছে গঠনের স্থান ও উপাদানে।
কিডনির পাথর গঠিত হয় প্রস্রাবতন্ত্রের অঙ্গ কিডনিতে। এগুলো সাধারণত ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিড জাতীয় খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, যা ডিহাইড্রেশন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বা জিনগত কারণে প্রস্রাবে অতিরিক্তভাবে জমা হয়। এই পাথর মূত্রনালিতে চলে গেলে পিঠ, পাশ বা তলপেটে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রস্রাবেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, গলব্লাডারের পাথর বা গলস্টোন গলব্লাডারে তৈরি হয়, যা যকৃতের নিচে থাকে এবং চর্বি হজমে সহায়তা করে। এই পাথর সাধারণত কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিন দ্বারা গঠিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গলস্টোন পিত্তনালিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ডান উপরের পেটের দিকে ব্যথা, বমি ভাব বা পেট ফাঁপার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর।
উপেক্ষা না করা উচিত এমন ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ
যারা কিডনি বা গলব্লাডারের পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের শরীরে বেশ কিছু সূক্ষ্ম উপসর্গ দেখা দিতে পারে শুরুতেই। নিচে তেমন ৫টি লক্ষণের কথা তুলে ধরা হলো, যা অবহেলা করা উচিত নয়-
১. পেট বা পাশে হালকা ব্যথা
কিডনির পাথরের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো নিচের পিঠ, পাশ বা কুঁচকির দিকে হালকা, টানটান ব্যথা অনুভব হওয়া। পানি কম খেলে বা শরীর চালনা করার পর এই ব্যথা বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, গলস্টোনের ক্ষেত্রে উপরের ডান পেটের দিকে হালকা অস্বস্তি বা ভারী লাগা অনুভব হতে পারে, বিশেষ করে তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর। অনেক সময় এটি গ্যাস বা হজমের সমস্যার মতো মনে হলেও, যদি নিয়মিত এমন হয়, তবে দ্রুত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
২. খাওয়ার পর বমি বা অস্বস্তি
গলব্লাডারের পাথরের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো খাবার পর বমি ভাব বা পেট ফাঁপা, বিশেষ করে তেলে ভাজা খাবার খাওয়ার পর। গলস্টোন পিত্তনালিতে বাধা সৃষ্টি করলে চর্বি হজমে সমস্যা হয়, আর সেখান থেকেই এই উপসর্গ।
কিডনির পাথরের ক্ষেত্রেও কিডনিতে জ্বালা বা সামান্য সংক্রমণ থাকলে বমি ভাব দেখা দিতে পারে, সঙ্গে থাকতে পারে হালকা পিঠব্যথাও।
৩. প্রস্রাবে পরিবর্তন
যেহেতু কিডনি শরীরের রক্ত ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে টক্সিন বের করে, তাই কিডনিতে পাথর হলে প্রস্রাবে বদল লক্ষ্য করা যায়। প্রস্রাব ঘোলা হয়ে যাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া বা লালচে বর্ণ ধারণ করা এর প্রাথমিক লক্ষণ। অনেক সময় প্রস্রাবের সময় জ্বালাও অনুভূত হয়, যা ইউরিনারি ইনফেকশনের মতো মনে হতে পারে।
তবে গলব্লাডারের পাথরের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রস্রাবের রঙ বা গন্ধে তেমন পরিবর্তন আসে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত জটিলতা তৈরি হয়।
৪. ঘন ঘন ও যন্ত্রণাদায়ক প্রস্রাব
কিডনির পাথর যদি মূত্রথলির কাছাকাছি চলে আসে, তবে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হতে পারে। কম পরিমাণ প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
গলব্লাডারের পাথরের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রস্রাবের উপর প্রভাব পড়ে না।
৫. হালকা জন্ডিস (চোখ বা ত্বকে হলুদভাব)
গলব্লাডারের পাথর যদি পিত্তনালি আটকে দেয়, তবে শরীরে বিলিরুবিন জমে গিয়ে চোখ বা ত্বকে হালকা হলুদভাব তৈরি হতে পারে। এটি জন্ডিসের একটি প্রাথমিক ইঙ্গিত।
তবে কিডনির পাথরের সঙ্গে সাধারণত জন্ডিসের সম্পর্ক নেই। যদি কখনও এই লক্ষণ দেখা যায়, তবে এটি অন্য কোনো লিভার বা গলব্লাডারের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
চিকিৎসা দ্রুত শুরু করাই সবচেয়ে জরুরি
কিডনি বা গলব্লাডারের পাথর যেটিই হোক, প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে নিতে পারলে পরবর্তী জটিলতা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। কোনো উপসর্গ বারবার দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা আপনাকে বাঁচাতে পারে অপারেশন বা গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে।
সূত্র:https://tinyurl.com/yc8k3wnj
আফরোজা