ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের আরেক এমপির কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫ কোটি টাকার চেক

জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে রিয়াদের চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৩০ জুলাই ২০২৫

জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে রিয়াদের চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য

রিয়াদ

রাজধানীর গুলশানের সাবেক এমপির পরিবারের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গুলশানে চাঁদাবাজির এক মাস আগে রিয়াদ ও তার দল নিয়ে আরেক সাবেক এমপি আজাদের অফিসে হামলা চালিয়ে ৫ কোটি টাকার চেক নিয়ে যায়। এরই সূত্র ধরে রিয়াদের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকা চেক উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সোয়া দুই কোটি টাকার চারটি চেক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। চেক প্রদানকারী ট্রেড জোনের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদের সই রয়েছে। চেক চারটি জনতা ব্যাংকের। দুটি চেকে এক কোটি করে দুই কোটি, একটি চেকে ১৫ লাখ ও আরেকটিতে ১০ লাখ টাকার পরিমাণ লেখা আছে। তবে চেকে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে ট্রেড জোন নামে। ট্রেড জোনের স্বত্বাধিকারীর নাম আবুল কালাম আজাদ।
ডিএমপির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আলী আহমেদ মাসুদ জানান, পীরগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে চেকগুলো নেওয়া হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সাবেক এমপি আজাদ জানান, গত ২৬ জুন রিয়াদের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল তার অফিসে ঢুকে তাকে হুমকি দেয়। তারা বলে, আপনি নিজে থানায় যাবেন, না আমরা নিয়ে যাব? এরপর তারা বলে, টাকা দেবেন, না বাইরে যে ২০০ লোক আছে তাদের জুতার বাড়ি, চড়-থাপ্পড় খাবেন? তিনি জানান, সে সময় আমার কাছে নগদ টাকা ছিল না। পরে তারা আমার মোবাইল ফোন ও প্রায় ৫ কোটি টাকার চেক নিয়ে যায়।

আজাদ জানান, তারা আমাকে শেখ হাসিনার দোসর উল্লেখ করে চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয়। পরে তারা আমার মোবাইল ফোনটি ফেরত দেয়। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা রংপুর-৬ আসন ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে আজাদ এমপি নির্বাচিত হন।
এর আগে বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত রিয়াদসহ চারজন আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে রিয়াদের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে চারটি চেক উদ্ধার করা হয়।

চেকে মোট টাকা ২ কোটি ২৫ লাখ। একইসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ টাকা এফডিআরের নথিও উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় আলাদা একটি মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। গ্রেপ্তারকৃত আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠন থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত ২৬ জুলাই গুলশানে সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মামলায় রিয়াদসহ চারজন বর্তমানে সাতদিনের রিমান্ড নিয়েছে পুলিশ। রিমান্ডকৃত অন্য তিনজন হচ্ছে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না (২৪), সদস্য সাকাদাউন সিয়াম (২২) ও সাদাব (২১)। এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কমিটি থেকে তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই অভিযুক্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে তাদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। শাম্মী আহমেদ বাসায় না থাকায় তার স্বামীর কাছে চাঁদা চাওয়া হয়। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে অপবাদ দেয় এবং চাপ দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আমি রিয়াদকে ১০ লাখ টাকা দেই। অভিযোগকারী জাফর জানান, গত ১৯ জুলাই তারা আবার বাসায় এসে দরজায় আঘাত করে, তবে তিনি পুলিশকে জানালে তারা চলে যায়।
গত ২৬ জুলাই রিয়াদ ও অন্যরা আবার আমাকে খুঁজতে আসে। আমি বাসায় ছিলাম না, তবে নিরাপত্তারক্ষীরা বিষয়টি আমাকে জানায়। তারা বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করে এবং অস্বীকৃতি জানালে আমাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি আবার পুলিশে ফোন দেই। এরপর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে আরেক অভিযুক্ত কাজী গৌরব পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।  
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে কয়েক মাস আগে ছাত্রসংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। এই সংগঠন হওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল, সেই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছিল আবদুর রাজ্জাককে।
এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী আগেই যদি পুলিশকে জানাতেন, তাহলে এ অপরাধ ঠেকানো যেত। পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে, কী কারণে তারা চাঁদা দিয়েছিলেন। তাদের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না।
গুলশানে চাঁদাবাজির সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, জানতে চাইলে তালেবুর রহমান বলেন, কারও দলীয় পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়। তদন্ত চলছে। আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্তে জানা যাবে।

প্যানেল হু

আরো পড়ুন  

×