
মানিকগঞ্জে কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর লাঙল দিয়ে হাল চাষ। এখন জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙল ও জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ।
আদিকাল থেকেই মানিকগঞ্জে বিভিন্ন গ্রামে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙল ও মই। কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্র দিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙল।
এক সময় মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় দেখা যেত সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেড়িয়ে যেত মাঠে। বামে-ডানে, হুঁট-হাট শব্দে গরুকে তাড়া করে চলে জমিতে হাল চাষ। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা।
মানিকগঞ্জের গ্রামগঞ্জে গৃহবধূরা কোমরে ভাতের গামলা আর হাতে পানির জগ নিয়ে সকাল হলেই আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের নিকট। কৃষকরা মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ লোকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এক সময়ে আমরা বল্ক গরু দিয়ে ভোরবেলা থেকে মাঠে হাল চাষ করতাম। এখন আর হাল চাষ করতে গরু লাগে না, পাওয়ার টিলারেই হাল চাষ হয়। আমরা যখন হাল চাষ করতাম তখন লাগতো লাঙল-জোয়াল, মই, গরু তাড়ানোর লাঠি, গরুর মুখের টোনা। পাওয়ার টিলারের আগমনে গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে।
তিনি আরো বলেন, গরুর লাঙল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো। এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো, তেমনি ফসলও ভালো হতো।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এই দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোকের জীবিকা কৃষিকাজের উপর নির্ভর। তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙল-জোয়াল, গরু, ফাল, দা, খুন্তি, মই এখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। তবে গরু থাকলেও লাঙলে হাল চাষ নেই।
বয়স্ক করিম মিয়া জানান, চরাঞ্চলে এখনো গরুর লাঙলে জমি চাষাবাদ করতে দেখা যায়। গরুর লাঙলে জমির চাষাবাদে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।
আফরোজা