ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ভয়ে কাঁপছে জাপানিরা, সুনামির সাথে কমিকের মিল

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ৩১ জুলাই ২০২৫

ভয়ে কাঁপছে জাপানিরা, সুনামির সাথে কমিকের মিল

ছবি: সংগৃহীত

কুসংস্কার, না কি কেয়ামতের দিন ঘিরে আসছে ধ্বংস? সেই প্রশ্নেই দিন গুনছে এখন জাপান। কারও কাছে এটি নিছক অলীক, কারও কাছে ভয়ংকর বাস্তবতা। কিন্তু আশেপাশের ঘটনা প্রবাহ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো একের পর এক মিল খুঁজে পাওয়ায় অনেকেই আঁতকে উঠছেন। কারণ, এক নিভৃতচারী মাঙ্গা আর্টিস্ট রিও তাৎসুকির হাতে আঁকা ‘গল্প’ আজ যেন বাস্তবের এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত রিও তাৎসুকির বই ওয়াটশিগা মিতামিরাই (অর্থাৎ ফিউচার আই সি)-তে উঠে আসে কিছু ভয়ানক পূর্বাভাস। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু, কিংবদন্তি শিল্পী ফ্রেডি মার্কারির চলে যাওয়া, ২০২১ সালে জাপানের ভূমিকম্প ও সুনামি, এমনকি করোনা মহামারির আগাম ইঙ্গিত—সবই ছিল তার আঁকা পাতায়। সে সময় যাকে নিছক কল্পনা বলা হয়েছিল, এখন তা একে একে মিলছে বাস্তবের ঘটনাবলির সঙ্গে।

তবে যা এবার ঘটল, তা যেন কল্পনারও বাইরে। কারণ, রিও তাৎসুকি তার বইতেই লিখেছিলেন—২০২৫ সালের ৫ জুলাই জাপানে আঘাত হানবে এক ভয়াবহ সুনামি। সেই দিনটি কেটে গেল শান্তভাবে। কেউ ভেবেছিল, হয়তো এবার তার ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে প্রমাণিত হলো। কিন্তু মাত্র ২৫ দিন পর, ৩০ জুলাই ভোরবেলা রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে ঘটে গেল ৮.৮ মাত্রার এক প্রলয়ঙ্কর ভূমিকম্প। তারপরই শুরু হয় সুনামির দানবীয় তাণ্ডব।

চার মিটার উঁচু জলচ্ছ্বাস ঢুকে পড়ে রাশিয়ার সেরগেই লেবেডেভ অঞ্চলসহ উপকূলের নানা প্রান্তে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জাপান, আমেরিকা, হাওয়াই, আলাস্কা, এমনকি ক্যালিফোর্নিয়াতেও। হোক্কাইডো থেকে ওয়াকাইয়ামা—জাপানের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো যেন আবার ফিরে পেল ২০১১ সালের সেই দুঃস্বপ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৫২ সালের পর এটি রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হলো, এই ভূমিকম্পের জেরে বিপদের মুখে পড়েছে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, চলছে জরুরি মূল্যায়ন। আর পশ্চিমা উপকূলে সর্বোচ্চ সতর্কতা। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের উপকূলীয় এলাকা খালি করে দিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে বেজে উঠেছে সুনামি অ্যালার্ম।

কিন্তু এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়েও বিশ্বজুড়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে রিও তাৎসুকির ভবিষ্যদ্বাণীর আশ্চর্য মিল। ঘটনাগুলোর সময় হয়তো সামান্য এদিক-সেদিক, কিন্তু ঘটনার ধরণ ও জায়গা প্রায় হুবহু মিলে গেছে তার আঁকা দৃশ্যগুলোর সঙ্গে। তাই আজ তাৎসুকির লেখা অনেকেই আর কল্পকাহিনি মনে করছেন না—বরং একরকম সাবধান বাণী হিসেবে দেখছেন।

সবচেয়ে ভয়ের বিষয়, তার ভবিষ্যৎ দর্শনে উল্লেখ রয়েছে ২০৩০ সালে আরেকটি নতুন মহামারীর ইঙ্গিত। তাৎসুকির দাবি অনুযায়ী, এটি করোনার চেয়েও অনেক বেশি প্রাণঘাতী হবে। অর্থাৎ, বিশ্ববাসীকে এখন থেকেই প্রস্তুত থাকার নিঃশব্দ বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি।

এখন প্রশ্ন উঠছে—এ কি নিছক কাকতালীয় মিল, নাকি মানব সভ্যতার জন্য এক ভয়ঙ্কর পূর্বাভাস? যা-ই হোক, রিও তাৎসুকির আঁকা পাতাগুলো যেন আর কেবল শিল্প নয়, হয়ে উঠেছে ইতিহাসের আগাম খসড়া। এবং সেই খসড়ায় লেখা আছে—শুরু হয়েছে ডুমস ডে’র দিন গণনা।

শেখ ফরিদ 

×