
চাঁদপুরের একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে অদ্যাবধি ওষুধ বরাদ্দ না থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা ওষুধ না পেয়ে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রায় ৯ মাস ধরে রোগীরা সরকারি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হলেও এ ব্যাপারে নেই কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা। তবে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা অবিলম্বে সরকারি ওষুধ পাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার অন্তর্গত এই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকটি ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে প্রসূতি মা ও নবজাতকদের সুচিকিৎসা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের অদূরে শহরের প্রেসক্লাব রোড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে চাঁদপুর শহর তথা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা প্রসূতি মা ও নবজাতকদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
বিধি অনুযায়ী, অত্র কেন্দ্রে ৯টি পদে জনবল থাকার কথা। পদগুলো হচ্ছে— তিনজন চিকিৎসক (মেডিকেল অফিসার–ক্লিনিক ও মেডিকেল অফিসার–অ্যানেসথেশিয়া), একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা, দুইজন সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন পিয়ন কাম চৌকিদার ও একজন গাড়িচালক। অথচ বর্তমানে সেখানে ১২ জন জনবল রয়েছে।
সেবা নিতে আসা কাজল রানী, সাকিনা বেগম ও মরিয়ম আক্তার বলেন, “হাসপাতালটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেলেও এখন এখানে চিকিৎসক, নার্সের সংকটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকে না। রোগী ভর্তি, অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা না থাকায় হাসপাতালটি এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসছে না।” সেবা কার্যক্রম না থাকায় রোগীদের জেলা সদর হাসপাতাল বা বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, ফলে ভোগান্তি বাড়ছে।
সদর উপজেলার আশিকাটি থেকে আসা রোগী রহিমা বলেন, “মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা পেয়ে শুরুতে খুশি হয়েছিলাম। এটি সঠিকভাবে চালু থাকলে তৃণমূল থেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবা নিতে পারতাম। কিন্তু এখন ওষুধ না থাকায় বাড়তি টাকা খরচ করে শহর থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে, এতে ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।”
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এটি চাঁদপুর জেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র হওয়ায় প্রতিদিন শতাধিক শিশু ও প্রসূতি মা এখানে আসেন। মাসে শতাধিক স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়ে থাকে। রেকর্ড অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১২৪টি স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। গত দুই বছরে প্রায় ৪১ হাজার রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
এ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. ইশরাত শারমিন লিজা বলেন, “চাঁদপুরের একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গত বছর নভেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওষুধ ক্রয়ের কোনো সরকারি অর্থ বরাদ্দ নেই। ফলে রোগীরা ওষুধ পাচ্ছেন না। কিছুদিন আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত ক্লিনিকটির জন্য কিছু ওষুধ বরাদ্দ দেন, সেগুলো দিয়েই চলছি। আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধের স্লিপ দিয়ে দিচ্ছি, যা বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে নিতে হচ্ছে।”
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, “গত সরকারের আমলে যেভাবে ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হতো, এখন সেই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে সেবা নিতে আসা রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। তবে আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। ওষুধ পেতে সময় লাগবে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, “বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা পরিষদ থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কিছু ওষুধ কিনে দিয়েছি। আশা করি, খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।”
সানজানা