ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই, এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৯ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের স্থান নেই, এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করব। বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।’
সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ মন্তব্য করেন। ৪০ মিনিটব্যাপী ওই বৈঠকে তাঁরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান শুল্ক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জ্যাকবসন বাংলাদেশের সংস্কার প্রচেষ্টা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তাঁর সরকারের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন, যা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া কমিশনের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মূল সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐক্য গঠনে সচেষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, কমিশন খুবই ভালো কাজ করছে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন।’ এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন,  সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জ্যাকবসনের বৈঠক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ, কাউন্টার টেরোরিজম, ইলেকশনের প্রস্তুতি, ঐকমত্য কমিশনের যে সংলাপগুলো হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, ‘এ সময় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জানিয়েছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম এবং তিনি আরও বলেছেন, টেরোরিস্টদের বিষয়ে এই সরকারের জিরো টলারেন্স।’
চিকিৎসকরা জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক ॥ জুলাইয়ে কর্তব্য পালনকারী চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, আপনারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। আপনারা সাহস, মানবতা ও দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই দুঃসময়ে আপনারা যে সেবা দিয়েছেন, তা আমরা কোনো দিন ভুলব না’।
সোমবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহত জুলাই যোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ। আমি এ ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। যারা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান, তাদের পেশার মাহাত্ম্য। যখন চারপাশে শুধু আতঙ্ক, কান্না আর অজানা আশঙ্কা তখন আপনারাই আমাদের আশার আলো। এই কঠিন সময়ে যারা ক্লান্তি ভুলে আহতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
যুদ্ধের সময়েও আক্রান্ত ও আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা হয় না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। এর ব্যতিক্রম আমরা দেখেছি এই বাংলাদেশে, চব্বিশের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে। ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা না পায়।’
তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের চিকিৎসক যোদ্ধাদের গল্প কোনো যুদ্ধক্ষেত্রের ডাক্তারদের গল্পকেও হার মানায়। রাস্তায় ছাত্রদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মেডিক্যালে ঢুকেও তাদের ওপর হামলা করেছিল, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি-ধমকি, নানা রকমের বাধা দেওয়া হয়েছিল। শত শত ছেলেমেয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছে। কারণ, তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি।’
ডাক্তার-নার্সরা নিজের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘নির্দেশ ছিল, আন্দোলনে আহত কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে না। আপনারা পেছনের গেট দিয়ে আহতদের গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালে হাসপাতালে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ, রেজিস্ট্রার খাতাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ডাক্তার-নার্সরা সে সময় নিজেদের জীবন বিপন্ন করে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিজেদের সর্বোচ্চ  সেবা দিয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা রোগীর কোনো তথ্য নথিভুুক্ত পর্যন্ত রাখেননি। কারণ, এসব নথির সূত্র ধরে আহতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। বিনামূল্যে দিনরাত গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারীদের জীবন বাঁচাতে আপনারা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। দুই চিকিৎসক বোনকে আমরা দেখেছি নিজ উদ্যোগে গ্যারেজের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন, অনেকে নিজেদের ঘরের মধ্যে অস্থায়ী ক্লিনিক তৈরি করে চিকিৎসা দিয়েছেন।’
ঝুঁকির মধ্যে থেকেও চিকিৎসকরা জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা নিজেরা ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন, আপনাদের পরিবার ঝুঁকির মধ্যে ছিল। তবু পাহাড়সম বাধা পার করে আপনারা মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, আহতদের জন্য রক্তের সংকট ছিল, প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম, অন্য রোগের তথ্য উল্লেখ করে তাদের পুলিশের কাছ থেকে আড়াল করেছেন। প্রাইভেট ডাক্তাররা স্বউদ্যোগে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে গোপনে চিকিৎসা দিয়ে এসেছেন। রক্ত দেওয়ার জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ ছিল না, আপনারা নিজেরাই এগুলো ব্যবস্থা করেছেন। অ্যান্টিবায়োটিক, পেইন কিলারের মতো ওষুধও আপনারা নিজেরাই সরবরাহ করেছেন।’

প্যানেল হু

×