
ছবি: সংগৃহীত।
সামুদ্রিক ফ্লেকি লবণ, গোলাপি রক সল্ট, ফ্ল্যর দ্য সেল- আধুনিক সময়ের টিভি শেফদের হাত ধরে এসব প্রাকৃতিক ও ব্যয়বহুল লবণ যেন এখন স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব লবণ বাজারজাত করা হচ্ছে এই দাবি নিয়ে যে, এতে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাত্রা কম এবং পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান বেশি - ফলে এগুলো সাধারণ টেবিল লবণের চেয়ে নাকি ‘উন্নততর’।
তবে এই প্রচারকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা অ্যাকশন অন সল্ট-এর গবেষণা ও প্রভাব বিষয়ক প্রধান এবং নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ সোফিয়া পম্বো। তিনি বলেন, “উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণ এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রমাণ অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত। এর ফলে পাকস্থলীর ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ে।”
পম্বো আরও বলেন, “কিছু কোম্পানি নিজেদের লবণকে ‘ভালো’ হিসেবে বাজারে তুলে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব লবণে যে পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম বা পটাশিয়াম থাকে, সেটা একেবারেই নগণ্য। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পেতে চাইলে একটি ফল খেলেই অনেক বেশি উপকার মিলবে।”
যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম লবণ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ এর চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি লবণ খাচ্ছেন। তবে পম্বোর মতে, ৬ গ্রামও কোনো লক্ষ্য মাত্রা নয় - কারণ “আমরা দৈনিক মাত্র ১ গ্রাম লবণেও বেঁচে থাকতে এবং স্বাভাবিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি।”
লবণে থাকা ইলেকট্রোলাইট নিয়েও অতিরঞ্জন করা হয় বলে মত দিয়েছেন তিনি। পম্বো বলেন, “যদি আপনি কোনো ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া থেকে সেরে উঠছেন, কিংবা সীমিত লবণ খেয়ে কঠোর ব্যায়াম করছেন, তখন হয়তো ইলেকট্রোলাইটযুক্ত স্যালাইন পানীয় উপকারে আসতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এগুলো প্রয়োজনীয় নয়- কারণ আমরা এমনিতেই প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি লবণ খাচ্ছি।”
তাঁর মতে, যদি কেউ নিজের লবণ ব্যবহারে সচেতন হতে চান, তাহলে ‘লো-সোডিয়াম সল্ট’ই কেবল তুলনামূলক ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধীরে ধীরে লবণ কমানো - যেন স্বাদে তেমন পার্থক্য না লাগে। এছাড়া ঘরে রান্না করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পাউরুটি, সস বা প্রসেসড খাবারে থাকা ‘গোপন লবণ’-এর দিকেও নজর দিন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
মিরাজ খান