ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত, দেড় লাখ পুলিশ প্রশিক্ষণ পাবে ॥ প্রেস সচিব

নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ৬০ হাজার সেনা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৮ জুলাই ২০২৫

নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ৬০ হাজার সেনা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনের জন্য দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাস প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। আর স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনে ৬০ হাজার সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ  হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বখস চৌধুরী, মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে রদবদল হবে, কিন্তু সব জায়গায় যে রদবদল হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে প্রয়োজন শুধু সেখানে রদবদল হবে।’ 
ব্রিফিংকালে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। দুই ঘণ্টার বৈঠকে সামনে নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন এবং সে অনুযায়ী আমরা আরও কী কী কাজ করতে পারি, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে। প্রথমত আলাপ হয়েছে সমন্বয় বাড়ানো নিয়ে। আর্মি, পুলিশ এবং তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন এদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে। স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য জোর দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিচালক বলেছেন, সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচুর অপতথ্য অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সামনে এটা আরও বাড়তে পারে। এটাকে সামনে রেখে ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার যেখানে দ্রুততার সঙ্গে এ অপতথ্যগুলো তুলে ধরতে পারব, সেটা প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কয়েকদিন আগে পুলিশের যে কমান্ড সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা সেখানে একটি মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেছেন। যাতে করে খুব দ্রুত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং সেখানে যেন প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো যায়। 
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, পুলিশের কাজগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, মিডিয়া সেন্টার না থাকার কারণে। পুলিশ অনেক ভালো ভালো কাজ করছে, অনেক জায়গায় হস্তক্ষেপ খুব দ্রুতই করছে, কিন্তু এ বিষয়গুলো অনেকের কাছে অজানা থাকছে।
এ সময় এক প্রশ্নে প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনী ৫ আগস্টের পর থেকেই মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও আছে। আমরা আশা করছি, এই নির্বাচনের সময় তাদের একটা বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে, তারা মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য।
অপর এক প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার কাজ নিয়েও আলাপ হয়েছে। নির্বাচনের সময় গোয়েন্দা সংস্থার মধ্য কোনো ধরনের দুর্বলতা যেন না থাকে, সেজন্য বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও যাতে সমন্বয় ভালো হয়, সেজন্য বলা হয়েছে।
উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, নির্বাচনের আগে অপরাধের হটস্পটগুলো দ্রুত  আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে চিহ্নিত করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে কী ধরনের বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া যেতে পারে, সেটা খতিয়ে দেখার জন্যও বলেছেন। বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর একটা সিচুয়েশন রিপোর্ট যেন কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠানো হয় যাতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে, মাঠের পরিস্থিতি কী এবং সে অনুযায়ী যাতে পদক্ষেপ নিতে পারে সেজন্য কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আজকে প্রশাসনে রদবদল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কীভাবে নির্বাচনের আগে রদবদল হবে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্যানেল হু

আরো পড়ুন  

×