
ছবি: সংগৃহীত
সামরিক ঐতিহ্যের দিন, অথচ আকাশজুড়ে শত্রুর ছায়া। প্রতিবছরের মতো এবারও রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবস ঘিরে সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজন হওয়ার কথা ছিল বিশাল যুদ্ধজাহাজ প্রদর্শনী ও নৌ প্যারেডের। কিন্তু ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার জেরে এই প্রথমবারের মতো বাতিল হয়ে গেল সেই কেন্দ্রীয় আয়োজন।
নেভা নদীর তীরে জমকালো প্যারেড, বিশাল যুদ্ধজাহাজ, নৌসেনাদের সম্মান প্রদর্শনী এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপস্থিতি—সবকিছুই ছিল নির্ধারিত। কিন্তু দিনের শুরুতেই ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে, প্রযুক্তির আঘাতে ভেঙে পড়ে রাশিয়ার গর্বের সামরিক আয়োজন।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন, এবার নৌবাহিনী দিবসের মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে প্যারেড না হলেও দিনটি কাজের পরিবেশে কেটেছে বলে জানান পুতিন। তিনি পেট্রোল স্পিডবোটে চড়ে শহরের ঐতিহাসিক নৌ সদর দপ্তরে যান এবং রাশিয়ার চারটি সমুদ্র অঞ্চলে চলমান ১৫০টিরও বেশি জাহাজ ও ১৫ হাজার নৌসেনার মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন।
কিন্তু বাস্তবতা স্পষ্ট—সেই সময় সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাশে ইউক্রেনের ড্রোন স্কোয়াড হামলা চালায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা সারাদিনে মোট ৫১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যদিও এটি আগের রেকর্ড ৫২৪টির তুলনায় কম—যেটি বিজয় দিবসের আগে চালানো হয়েছিল।
লেলিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার ড্রোসকো জানান, তার এলাকায় ১০টির বেশি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়, যার ধ্বংসাবশেষে আহত হন এক নারী। হামলা জিএমটি সকাল ৮:৪০ মিনিটে প্রতিহত করা হয়।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ—পুলকোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়। এই সময়ে ৫৭টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয় এবং ২২টি ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ মানে শুধু সিভিলিয়ান ট্রাফিক নয়, এটি রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
ক্রেমলিনঘনিষ্ঠ রুশ ব্লগার আলেকজান্ডার ইউনাশেফ বলেন, ড্রোন হামলার কারণে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী ফ্লাইটে দুই ঘণ্টা দেরি হয়। অর্থাৎ শুধু নৌ প্যারেড নয়, সার্বিক যাতায়াত ও রাজনৈতিক সময়সূচিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা এখন রাশিয়ার গভীর অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। প্রতীকী দিনগুলোতে হামলা চালিয়ে ইউক্রেন দেখাতে চাচ্ছে—এটি কেবল যুদ্ধ নয়, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। যেখানে ভয়, বিভ্রান্তি ও প্রভাব ছড়িয়ে নিরাপত্তাবোধকেই টার্গেট করা হয়।
এবারের ঘটনাও তারই প্রমাণ। সেন্ট পিটার্সবার্গ—রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, প্রেসিডেন্টের নিজের শহর—সেই শহরের আকাশেই যদি ড্রোন ঢুকে পড়ে, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই—রাশিয়ার আকাশ আদৌ নিরাপদ তো?
বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষণে এই ড্রোন যুদ্ধ এখন এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। যুদ্ধজাহাজ, জেট, ট্যাংক সবকিছুর উপরে উঠে গেছে হালকা, সাশ্রয়ী, কিন্তু কার্যকর ড্রোন। আর এই প্রযুক্তি দিয়েই ইউক্রেন রাশিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছে—যুদ্ধের কেন্দ্র আর শুধু ফ্রন্টলাইনে সীমাবদ্ধ নেই।
শেখ ফরিদ