ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় না খেয়ে আছে মানুষ, খাদ্যকেন্দ্র গড়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:২০, ২৮ জুলাই ২০২৫

গাজায় না খেয়ে আছে মানুষ, খাদ্যকেন্দ্র গড়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ অনাহারে ভুগছে এবং ইসরায়েল মানবিক সহায়তায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি গাজাবাসীর জন্য খাদ্যকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার স্কটল্যান্ড সফরকালে ট্রাম্প বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, অনাহার ও কুপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবি বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করেছে এবং পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েল সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্ষোভ ও নিন্দা জোরদার হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, “গাজায় প্রচুর মানুষ অনাহারে ভুগছে। ইসরায়েল যদি মানবিক সহায়তার প্রবাহ বাড়ায়, তাহলে অনেক জীবন রক্ষা সম্ভব।” তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ‘খাদ্যকেন্দ্র’ স্থাপন করবে যেখানে প্রবেশে কোনো প্রাচীর বা সীমাবদ্ধতা থাকবে না, যাতে সহজে সহায়তা পৌঁছানো যায়। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সমন্বয় করবে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জন অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছে, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু। এ নিয়ে অনাহারে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪৭-এ।

ইসরায়েল সম্প্রতি তিনটি এলাকায় প্রতিদিন মানবিক বিরতির ঘোষণা দিয়েছে, সহায়তা বহনের জন্য নতুন করিডোর এবং বিমান থেকে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহও শুরু হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা ওয়েসাল নাবিল বলেন, “তিন সন্তানকে খাওয়ানো কঠিন হয়ে গেছে। অনাহারে ঘুমানো মানেই সকালে আবার নতুন করে ক্ষুধার্ত জাগা। আমরা যেভাবে পারি ওদের মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করি।”

তিনি বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের প্রতি দয়া করুন, আমাদের পাশে থাকুন যতক্ষণ না সহায়তা পৌঁছায় এবং তা যেন আমাদের হাতে পৌঁছায়।”

ইসরায়েলের দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং বাস্তব পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই নতুন মানবিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন গাজায় অন্তত ১০০ ট্রাক সহায়তা পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এ পর্যন্ত মাত্র ৬০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আঞ্চলিক পরিচালক সামের আবদেলজাবার বলেন, “প্রায় ৪৭০,০০০ মানুষ দুর্ভিক্ষসদৃশ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ৯০,০০০ নারী ও শিশুর জন্য বিশেষ পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন।”

নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান জান এগেল্যান্ড বলেন, “প্রতিদিন শিশু মারা যাচ্ছে অনাহার ও প্রতিরোধযোগ্য রোগে। সময় শেষ হয়ে আসছে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় কোনো ‘অনাহারের নীতি’ নেই। তিনি বলেন, যুদ্ধ হোক বা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় থাকুক, সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

COGAT (Coordination of Government Activities in the Territories)-এর একজন মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মানবিক বিরতিতে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার জানান, ইসরায়েল আপাতত এক সপ্তাহের জন্য সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মুখপাত্র এরি কানেকো বলেন, “আমরা আশা করি এই বিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং তা স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হবে।”

ট্রাম্প আরও বলেন, হামাসের সঙ্গে আলোচনা কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে অপহৃতদের মুক্তির নানা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে অপহরণ করে। সর্বশেষ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৯৮ জন নিহত হয়েছে।

এদিকে, কিছু সহায়তাবাহী ট্রাক দস্যুতার শিকার হয়েছে, কেউ কেউ অস্ত্রের মুখে খাদ্য কেড়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গাজার এক প্রাক্তন কারখানা মালিক ইমাদ বলেন, “খাদ্য পেতে এখন দৌড়ঝাঁপ করে কে আগে পৌঁছাবে, সেটাই মূল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নৈরাজ্য থামাতে হবে, ট্রাকের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, গাজার বাইরে ১,৭০০০০ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে, যা তিন মাসের জন্য পর্যাপ্ত। তারা অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে যাতে তা গাজায় প্রবেশ করানো যায়।

COGAT জানায়, রোববার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ১২০টির বেশি ট্রাক সহায়তা গাজায় বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার আরও সহায়তা পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। কাতার জানিয়েছে তারা ৪৯টি ট্রাক পাঠিয়েছে। জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিমান থেকে খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী ছুঁড়ে দিয়েছে।

ইসরায়েল মার্চ মাসে গাজার সহায়তা বন্ধ করেছিল হামাসকে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে। মে মাসে সীমিত সহায়তা আবার চালু হয়, তবে নতুন বিধিনিষেধে। হামাস ইসরায়েলকে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং সহায়তা যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে না পড়ে তা নিশ্চিত করাই তাদের দায়িত্ব। তারা গাজার জনগণের দুর্ভোগের জন্য হামাসকেই দায়ী করেছে।


গাজায় দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সংকট এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হবে। ট্রাম্পের খাদ্যকেন্দ্রের ঘোষণা, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং ইসরায়েলের নতুন মানবিক পরিকল্পনা সবই সময়মতো বাস্তবায়ন হওয়াই এখন গাজার মানুষের একমাত্র আশার আলো।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4wbxhzhx

আফরোজা

আরো পড়ুন  

×