ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

চুল পড়া কমাতে এখনই জেনে নিন এই ৭টি পরীক্ষিত ঘরোয়া কৌশল!

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৮ জুলাই ২০২৫

চুল পড়া কমাতে এখনই জেনে নিন এই ৭টি পরীক্ষিত ঘরোয়া কৌশল!

হঠাৎ করে চিরুনিতে বেশি চুল উঠছে? মাথার একাংশে পাতলা হয়ে যাচ্ছে চুল? আপনি একা নন। Alopecia বা চুল পাতলা হওয়ার সমস্যায় আজ বহু মানুষ ভুগছেন। ক্লিনিকের দামী চিকিৎসা কিংবা রাসায়নিক ভর্তি পণ্যের আগে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন ঘরোয়া কিছু প্রাকৃতিক উপায়—যা যেমন নিরাপদ, তেমন কার্যকরও। এগুলোর বেশিরভাগ উপাদানই পাওয়া যায় আপনার রান্নাঘরেই।

চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজাতে প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ ধীরে ধীরে কিন্তু কার্যকরভাবে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে, যা দীর্ঘমেয়াদে চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু প্রমাণিত ঘরোয়া পদ্ধতির কথা।

নারিকেল তেল ও পেঁয়াজের রসের জুটি

এই যুগলটি চুলের যত্নে বহুদিন ধরেই পরিচিত। নারিকেল তেল মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে ও চুলের গোড়া মজবুত করে। অন্যদিকে পেঁয়াজের রসে থাকা সালফার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করে।
প্রথমে ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল গরম করে নিন। এরপর এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন ১–২ টেবিল চামচ তাজা পেঁয়াজের রস (পেঁয়াজ কুচি করে ছেঁকে নিন)। এই মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে আলতোভাবে মালিশ করুন এবং ৩০–৬০ মিনিট রেখে দিন। এরপর ভালো করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন, প্রয়োজনে দুইবার। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে ধীরে ধীরে স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ফিরে আসবে।

রোজমেরি তেল: চুলের বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক টনিক

রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল চুল গজাতে বেশ কার্যকর। এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা চুল গজানোর প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে।
৫–৬ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েলের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ জোজোবা বা আমন্ড তেল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে মালিশ করুন। ৩০–৪৫ মিনিট বা ইচ্ছা হলে সারারাত রেখে দিন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ১–২ বার নিয়মিত ব্যবহারে আপনি পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

ডিমের হেয়ার মাস্ক: ভঙ্গুর চুলে প্রাণ ফেরায়

ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, বায়োটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা চুলকে মজবুত ও উজ্জ্বল করে। একটি ডিমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ করে অলিভ অয়েল ও মধু মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ পরে ২০–৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করুন। প্রতি ১০ দিন পরপর এই মাস্ক ব্যবহার চুলের গঠন মজবুত করে।

জবা ফুল ও পাতার প্যাক: প্রাকৃতিক কন্ডিশনার

জবা ফুল ও পাতা ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিডে ভরপুর, যা চুল গজাতে সাহায্য করে এবং ভাঙা চুলের সমস্যা কমায়। কয়েকটি ফুল ও পাতা বেটে তার সঙ্গে অল্প পানি বা নারিকেল তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি চুল ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহারে উপকার পাবেন।

সবুজ চায়ের হেয়ার রিন্স: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ

গ্রিন টি শুধু শরীরের জন্য নয়, চুলের জন্যও দারুণ উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বকে আরাম দেয় ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
২ কাপ গরম পানিতে ২টি গ্রিন টি ব্যাগ ডুবিয়ে রেখে ঠান্ডা হলে চুলে ঢেলে দিন। শ্যাম্পুর পর এটি ব্যবহার করুন। ১০–১৫ মিনিট পরে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২–৩ বার প্রয়োগে ভালো ফল মিলবে।

খাবার ও জীবনযাত্রার প্রভাব

শুধু বাইরের যত্ন নয়, চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে আপনার খাওয়া-দাওয়া ও দৈনন্দিন অভ্যাসের ওপরও। বায়োটিন, আয়রন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, বাদাম, লাল শাক, মুসুর ডাল, কুমড়োর বীজ ও হোল গ্রেইন খাবার খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ঘুম ঠিক রাখুন এবং মানসিক চাপ কমাতে হাঁটাচলা বা মেডিটেশন অভ্যাস করুন।

সতর্কতা

ঘরোয়া কোনো উপাদান ব্যবহারের আগে অবশ্যই একটি প্যাচ টেস্ট করে নিন। বিশেষ করে পেঁয়াজের রস বা এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এটি জরুরি। মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফল পেতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরতে হবে। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের অবস্থা দৃশ্যমানভাবে উন্নত হয়।

তবে যদি হঠাৎ করে অতিরিক্ত চুল পড়া, মাথার চুলে প্যাচ সৃষ্টি, চুলের সঙ্গে চুলকানি বা লালচে ভাব দেখা যায়, কিংবা শরীরের অন্যান্য উপসর্গ যেমন ওজন কমে যাওয়া বা ক্লান্তি দেখা দেয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Alopecia কী?

Alopecia হলো এক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে মাথার ত্বক বা শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে চুল পড়ে যায়। এটি অল্প পাতলা চুল থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ টাক হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে। প্রধানত হরমোন, জিনগত কারণ, অটোইমিউন সমস্যা, স্ট্রেস বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এটি হয়। সবচেয়ে সাধারণ হলো অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (পুরুষ বা নারীসুলভ টাক), আবার অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা হলে শরীর নিজের ইমিউন সিস্টেম দিয়ে চুলের ফলিকল আক্রমণ করে।

ঘরোয়া উপায়ে কি চুল ফেরা সম্ভব?

চুল পড়া বা অ্যালোপেশিয়ার ধরন ও কারণের ওপর নির্ভর করে চুল ফিরে আসা সম্ভব। স্ট্রেস বা ওষুধজনিত অস্থায়ী চুল পড়া কমে গেলে চুল আবার গজায়। তবে অটোইমিউন ধরনের ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে চুল গজানো সম্ভব হলেও তা অনিশ্চিত হতে পারে। তাই শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

চুলের যত্ন নেয়া শুধু রূপচর্চা নয়, এটি আত্মবিশ্বাস গঠনের একটি দিক। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে এই সহজ ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো একদিকে যেমন কম খরচে স্বাস্থ্যকর সমাধান দিতে পারে, অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তিও দেয়। রাসায়নিকের ঝুঁকি ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নিতে এগিয়ে আসুন। আপনার Alopecia বা চুল পড়া সমস্যা ঘরোয়া এই পদ্ধতিগুলো থেকে কতটা উপকার পেয়েছেন, তা জানাতে পারেন মন্তব্যে।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/38tkuc82

আফরোজা

×