ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

৩০ পেরোলেই সাবধান! সুস্থ থাকতে এখনই ৫টি পরিবর্তন আনুন!

প্রকাশিত: ০২:৩১, ২৯ জুলাই ২০২৫

৩০ পেরোলেই সাবধান! সুস্থ থাকতে এখনই ৫টি পরিবর্তন আনুন!

ছবি: সংগৃহীত

৩০ বছর বয়স পার করা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সময়ে শরীর এবং জীবনযাত্রায় এমন কিছু পরিবর্তন আসে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। কৈশোর বা বিশের দশকের মতো শরীর আর সবকিছু সহজে মানিয়ে নিতে পারে না। বিপাক প্রক্রিয়া ধীর হতে শুরু করে, হরমোনের পরিবর্তন আসে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো আরও স্পষ্ট হতে থাকে। তাই ৩০ পেরোলেই সুস্থ থাকতে কিছু নির্দিষ্ট লাইফস্টাইল পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।

যদি ৩০ বছর বয়স হয়ে গিয়ে থাকে অথবা কাছাকাছি পৌঁছে থাকেন, তাহলে এখনই সতর্ক হোন! কারণ, সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করতে এখনই আপনার লাইফস্টাইলে আনতে হবে এই ৫টি জরুরি পরিবর্তন:

১. নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস
কেন জরুরি: ৩০ এর পর মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়, ফলে আগের মতো খেলে ওজন বাড়তে পারে। এছাড়াও, হাড়ের ঘনত্ব কমা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার মতো বিষয়গুলো এই বয়সে শুরু হতে পারে।

কী পরিবর্তন আনবেন:

প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন ফাস্ট ফুড, চিনিযুক্ত পানীয়, ভাজাপোড়া) যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

আপনার খাদ্যতালিকায় বেশি করে ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন (যেমন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল) এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, অলিভ অয়েল) যোগ করুন।

আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান, যা হজমে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন, শরীরকে সতেজ রাখতে এবং মেটাবলিজম ঠিক রাখতে এটি জরুরি।

২. নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক সক্রিয়তা
কেন জরুরি: পেশী শক্তি এবং হাড়ের ঘনত্ব ৩০ এর পর থেকে কমতে শুরু করে। শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং হাড়ের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।

কী পরিবর্তন আনবেন:

প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট মাঝারি থেকে তীব্র ব্যায়াম করুন। হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা শক্তি প্রশিক্ষণ বেছে নিতে পারেন।

ব্যায়ামের রুটিনে স্ট্রেন্থ ট্রেনিং (ওজন তোলা বা নিজের শরীরের ওজনে ব্যায়াম) যোগ করুন, যা পেশী এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করুন; প্রতি ঘণ্টা পর পর বিরতি নিন এবং কিছুক্ষণ হাঁটুন।

৩. পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম
কেন জরুরি: ঘুমের অভাব মানসিক চাপ বাড়ায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ৩০ পেরোলে ঘুমের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক।

কী পরিবর্তন আনবেন:

প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

একটি নির্দিষ্ট ঘুমের সময়সূচী (এমনকি ছুটির দিনেও) মেনে চলুন।

ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট (মোবাইল, ল্যাপটপ) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক ও অন্ধকার রাখুন।

৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ (স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট)
কেন জরুরি: ৩০ এর পর কর্মজীবনে এবং ব্যক্তিগত জীবনে চাপ বাড়তে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হজমের সমস্যা এবং বিষণ্নতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কী পরিবর্তন আনবেন:

মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কৌশলগুলো দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন।

আপনার শখের কাজ বা পছন্দের বিনোদনের জন্য সময় বের করুন।

প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান এবং প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে নিজের অনুভূতি ভাগ করে নিন।

অতিরিক্ত কাজ বা দায়িত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে 'না' বলতে শিখুন।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা
কেন জরুরি: ৩০ এর পর কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে তার প্রতিকার সহজ হয়।

কী পরিবর্তন আনবেন:

প্রতি বছর অন্তত একবার কমপ্লিট হেলথ চেকআপ করান, যার মধ্যে রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল এবং থাইরয়েড পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নিজের পারিবারিক স্বাস্থ্যের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত থাকুন এবং সেই অনুযায়ী বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

শরীরে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, অবহেলা করবেন না।

৩০ বছর বয়স নতুন করে নিজেদের যত্ন নেওয়ার একটি সুযোগ। এই সহজ পরিবর্তনগুলো আপনার জীবনকে আরও সুস্থ, সুখী এবং দীর্ঘায়ু করতে সাহায্য করবে। আজই এই অভ্যাসগুলো আপনার লাইফস্টাইলে যোগ করুন এবং একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যান!

ফারুক

×