
ছবি: জনকণ্ঠ
গাইবান্ধাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত চার লেন সড়কটি চালু হলেও, তার পূর্ণ সুফল থেকে এখনো বঞ্চিত শহরবাসী। কারণ, ব্যস্ত সড়কের ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০টি বিদ্যুতের খুঁটি—যেগুলো যান চলাচলে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করছে, বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর উদ্বোধন হয় গাইবান্ধা শহরের পূর্ব প্রান্তের বড় মসজিদ থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এই চার লেন সড়কের। ১১৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মধ্যে সড়ক নির্মাণে ৬ কোটি এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয় ১১১ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স।
নির্ধারিত মেয়াদ অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের শুরুর দিকে নির্মাণ শেষ হয়। কিন্তু দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সড়কের মাঝখানে থাকা বিদ্যুতের খুঁটিগুলো আজও সরেনি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রায় ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
বিশেষ করে শহরের হকার্স মার্কেট, ডাকবাংলো মোড়, সাদুল্লাপুর মোড়, ফকিরপাড়া, পলাশপাড়া, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এখনো খুঁটিগুলো রয়ে গেছে। এর ফলে প্রতিদিন যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, ঝুঁকিতে পড়ছে পথচারী ও চালকরা।
ফকিরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী দীপন মিয়া বলেন,
“সড়কে খুঁটি থাকার কারণে আমরা প্রতিদিন দুর্ঘটনার ভয়ে থাকি। দোকানের সামনে দিয়েই গাড়ি যাওয়া-আসা করে। এভাবে আর কতদিন চলবে?”
পলাশপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, “খুঁটির কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও ঝুঁকিতে পড়েছে। বৃষ্টির সময় তো ফুটপাত দিয়ে হাঁটতেই ভয় লাগে।”
বাস টার্মিনালের ট্রাকচালক আমির মিয়া বলেন, “মূল সড়কের পাশে খুঁটি থাকায় গাড়ি ঠিকমতো ঘোরানো যায় না, মাঝে মাঝেই যানজট লেগে যায়।”
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিয়াস কুমার সেন জানান, “দীর্ঘ সময়েও খুঁটি সরানো না হওয়ায় জনভোগান্তি হচ্ছে, আমরা বারবার বিদ্যুৎ বিভাগকে তাগাদা দিচ্ছি।”
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের (নেসকো-০২) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ জানিয়েছেন, “জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও কিছু স্থানীয় বাধার কারণে খুঁটি সরানো বিলম্ব হচ্ছে। পৌরসভা, সওজ এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যার সমাধান করতে কাজ চলছে।”
সময় ধরে অপেক্ষা করা জনগণের একটাই দাবি—ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের সুফল যেন সঠিকভাবে পাওয়া যায়। উন্নত অবকাঠামোর স্বপ্ন দেখিয়ে যদি শুধু ভোগান্তি থেকে যায়, তবে জনগণ কী লাভ পেল?
জরুরি ভিত্তিতে সকল দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে দ্রুত খুঁটি অপসারণ না করলে, এ উন্নয়ন হবে কেবল ‘কাগুজে উন্নয়ন’। গাইবান্ধাবাসী চায় কার্যকর সমাধান, দ্রুত পদক্ষেপ।
মুমু ২