
ছবি: জনকণ্ঠ
একসময় ঢাকার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি দোকানে, এমনকি রিকশাচালকের হাতেও দেখা যেত বাঁশের তৈরি পাখা বা তালপাতার হাতপাখা। বৈদ্যুতিক পাখা ছিল না, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ছিল কল্পনার বাইরে। তখন মানুষ গরমের তীব্রতা দূর করত এই প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী হাতপাখার মাধ্যমেই। আজ সেই ঐতিহ্য প্রায় হারিয়ে গেছে। নগরায়ন, প্রযুক্তির আগ্রাসন আর প্রাকৃতিক জীবনধারার বিস্মরণে এই সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
ঢাকার পুরান এলাকা—বংলা বাজার, ইসলামপুর, কাঁটাবন কিংবা কারওয়ান বাজারে একসময় হাতপাখা বিক্রির ধুম থাকত। স্কুল-কলেজে গরমে শিক্ষার্থীরা ব্যাগে রাখত ছোট হাতপাখা। বাসার ঠাকুরমা দিদিমারা হাতের তালুতে চাপ দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করতেন ক্লান্ত দুপুরে। আজ এসব স্মৃতিতে বন্দী। নতুন প্রজন্ম হয়তো পাখা দেখেইনি, জানেই না এর ব্যবহার।
বাঁশ, তালপাতা বা খর্জুরপাতা দিয়ে এসব পাখা তৈরি করতেন কারিগররা। রাজধানীর আশপাশে গাজীপুর, নরসিংদী, মধুপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব পাখা এনে হাটে-বাজারে বিক্রি করতেন তারা। এখন সেই কারিগররা পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন।
ঢাকার এক কারিগর বলেন, আগে ১০০ পিস নিলে দিনে শেষ হয়ে যেত। এখন ১০টা বিক্রি করতেই কষ্ট হয়।
বৈদ্যুতিক পাখা, এসি কিংবা হাই-টেক কুলিং সিস্টেমের ভিড়ে হাতপাখার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এক ধরণের সাংস্কৃতিক বন্ধনও। হাতে পাখা নেড়ে গল্প বলা, পাশের জনকে বাতাস করা, কিংবা দুপুরবেলার গল্প-আড্ডা—এসব আজ কেবলই স্মৃতি।
পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে বাঁশের ও তালপাতার পাখার ব্যবহার আবার ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। শহরে গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে হাতপাখা একটি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব বিকল্প। পাশাপাশি হস্তশিল্প হিসেবে এটি পর্যটন খাতে বিকাশ লাভ করতে পারে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের পাখা, তালপাতার হাতপাখা আজ হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের স্রোতে। প্রযুক্তি আমাদের জীবন সহজ করেছে, তবে তার সঙ্গে নিয়েছে বহু নরম, মানবিক, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া পাখাগুলোর গল্প যেন কেবল বাতাস নয়, ইতিহাসও বলে—আমাদের শিকড়ের ইতিহাস।
ছামিয়া