ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

কুমেক হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা, পুরো হাসপাতাল যেন নোংরার কারখানা

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:১০, ২৯ জুলাই ২০২৫

কুমেক হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা, পুরো হাসপাতাল যেন নোংরার কারখানা

ছবি: জনকণ্ঠ

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের পরিবেশ এখন রোগীদের জন্য আতঙ্কের নাম। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের টাইলস নোংরা, শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য, চারদিকে দুর্গন্ধ আর ময়লার স্তূপ—সব মিলিয়ে যেন একটি নোংরার কারখানা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে কুমেক হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় এমন ভয়াবহ চিত্র। ব্যবহৃত টিস্যু, মাস্ক, কাগজের টুকরো, ফলের খোসা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মেঝেতে। দেয়ালে কফ, থুতু ও পানের পিকের ছোপ—যা দেখে মনে হয় বছরের পর বছর ধরে তা পরিষ্কার করা হয়নি। শয্যার চাদরগুলোতে ছারপোকার উপদ্রব, রোগীদের জন্য যা আরও যন্ত্রণাদায়ক।

৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানে এমন নোংরা পরিবেশে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়া চরম অব্যবস্থাপনারই প্রতিফলন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের শৌচাগারে পড়ে থাকে ব্যবহৃত টিস্যু, মাস্ক ও অন্যান্য আবর্জনা। লোহার তৈরি বেড, ওষুধ রাখার ট্রে ও অন্যান্য সরঞ্জামেও জমে রয়েছে মরিচা ও ময়লার দাগ। শৌচাগারের সামনে রাখা ডাস্টবিন ঠিকমতো পরিষ্কার না করায় চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছির উপদ্রব যেন এক চিরচেনা চিত্র। শৌচাগারের ভেতরে বাতির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে, যার ফলে রোগীদের পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়।

জানা গেছে, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬৩ জন বেতনভুক্ত কর্মচারী ও ৯২ জন অস্থায়ী কর্মচারী রয়েছেন। তিন শিফটে তাঁরা কাজ করলেও অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ কর্মী দায়িত্বে গাফিলতি করছেন। অথচ বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো তদারকি নেই।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চরমভাবে উদাসীন। পরিচ্ছন্নকর্মীরা দিনে মাত্র একবার এসে কোনোরকমে মেঝে মোছার কাজ শেষ করে চলে যান। এরপর সারাদিন আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে ধুলা, মাছি আর ময়লার সঙ্গে সঙ্গেই কাটাতে হয় রোগীদের।

চান্দিনার মাদাইয়া এলাকার রোগী বিল্লাল হোসেন বলেন, “হাসপাতালে মানুষ আসে সুস্থ হতে। কিন্তু এখানে যে অবস্থা, এতে উল্টো অসুস্থ হওয়ার দশা। বাথরুমে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় এই হাসপাতালের কোনো অভিভাবকই নেই।”

একজন রোগী সাব্বির বলেন, “ভর্তির সময় যে চাদর দেওয়া হয়েছিল, এক দিন পরেই তা নোংরা হয়ে যায়। নার্সদের অনেকবার বলার পরও পরিবর্তন করা হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে চাদর কিনে আনতে হয়। আর ছারপোকার কথা না বললেই নয়—এত বেশি ছারপোকা যে ঘুমানোই যায় না।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “প্রতিদিন অন্তত একবার বিছানার চাদর পরিবর্তন করা এবং হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর সুস্থতার জন্য পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্টদের বললেও কার্যকর উদ্যোগ নেই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, “৫০০ বেডের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা যদি দ্বিগুণ বা চারগুণ হয়ে যায়, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতেই পারে। তবুও আমরা রোগীদের সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব রোগীদের জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্যও তা প্রশ্নবিদ্ধ করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রোগীরা এই সেবা প্রতিষ্ঠানে আরও ভোগান্তির শিকার হবেন।

আবির

আরো পড়ুন  

×