ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

খাদ্য-পানির সরবরাহ আটকে গাজায় গণহত্যা, মার্কিনিদের ঘরে ঘরে পানির ট্যাপে মৃত্যু পরোয়ানা!

মেহেদী কাউসার

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

খাদ্য-পানির সরবরাহ আটকে গাজায় গণহত্যা, মার্কিনিদের ঘরে ঘরে পানির ট্যাপে মৃত্যু পরোয়ানা!

গ্রাফিক্স: জনকণ্ঠ

গাজা উপত্যকায় পানি ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ইতোমধ্যে গাজার ৮৫ শতাংশ পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো অচল হয়ে গেছে। পাইপলাইন, কূপ, পরিশোধন কেন্দ্র সবকিছুই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি গাজায় ঢুকতে না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোও ঠিক করা যাচ্ছে না।

পানি সরবরাহের কাজ করা কর্মীরাও নিরাপদ নন। সম্প্রতি গাজা সিটির রেমাল এলাকায় একটি পানি শোধনাগারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ৫ জন কর্মী। অন্যদিকে, ১৩ জুলাই নুসাইরাতের শরণার্থী শিবিরে পানির লাইনে দাঁড়ানো মানুষের ওপর হামলায় নিহত হন ১১ জন, যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু।

গাজার সাধারণ মানুষকে এখন পানি সংগ্রহে প্রতিদিন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। অনেকেই প্লাস্টিকের জগ বা পাত্র হাতে নিয়ে রেশনের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দূষিত কূপের পানি পান করছেন, ফলে হেপাটাইটিস এ-সহ নানা পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা নতুন এক পানিজনিত বিপদের মুখে পড়েছেন। তাদের ঘরের ট্যাপের পানিতে পাওয়া যাচ্ছে এক ভয়ংকর জীবাণু— Naegleria fowleri, যাকে বলা হয় "ব্রেইন-ইটিং অ্যামিবা"। এটি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে আক্রমণ করে এবং দ্রুত মৃত্যু ঘটায়।

এই রোগের নাম প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস (PAM)। ১৯৬২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন, কিন্তু বেঁচে ফিরেছেন মাত্র চারজন।

এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ স্বাদু পানিতে পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি এটি ট্যাপের পানিতে মিলছে, বিশেষ করে যেসব জায়গায় পানির পরিশোধন ব্যবস্থা দুর্বল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাক পরিষ্কারের কাজে (যেমন নেটি পট) ব্যবহারের সময় অবশ্যই ফুটানো বা বোতলজাত পানি ব্যবহার করতে হবে।

এমন অবস্থায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্র যে নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, এই "ব্রেইন-ইটিং অ্যামিবা" কি সেই নৈতিক দায়িত্বহীনতারই এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিশোধ?

একদিকে গাজাবাসী দিনে পাচ্ছে মাত্র ২ থেকে ৯ লিটার পানি, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ পানির ভয়ংকর জীবাণু নিয়ে আতঙ্কে। পানি, যা হওয়া উচিত ছিল বাঁচার উপায়, তা এখন দুই দেশের মানুষের কাছেই হয়ে উঠেছে মৃত্যুর কারণ।

এই বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যেখানে অন্যায়কে থামানো হয় না, সেখানে তা কোনো না কোনোভাবে ফিরে আসে। এবং তা কখনো কখনো প্রকৃতির হাত ধরে।

এম.কে.

×