
ছবি: জনকণ্ঠ
নিখোঁজের ২২ ঘণ্টা পরও ড্রেনের ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ নারী কেমিস্ট জ্যোতিকে (২৪) উদ্ধার করতে না পারায় বিক্ষুব্ধ জনতা টঙ্গী এরশাদ নগরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছে। সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় স্থানীয় জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তাঘাট আটকে বিক্ষোভ শুর করে এবং রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এসময় ঢাকা টঙ্গি গাজীপুর ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল মহাসড়কের এরশাদ নগরের দুদিকে সব যানবাহন আটকা পড়ে। দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার টঙ্গী বাজার এবং উত্তরে ৪ কিলোমিটার ছয়দানা মালেকের বাড়ি পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। শত শত যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। অবরোধকারীদের কথা নিখোঁজ জ্যোতির লাশ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ থাকবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গতকাল রবিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী হোসেন মার্কেটে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পানির ড্রেনের ম্যানহোলে পড়ে নারী কেমিস্ট জ্যোতি নিখোঁজ হন। তার সন্ধান এখনও মেলেনি।
জ্যোতি দেশের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪ নং ওয়ার্ড মসজিদ পাড়ায়। বাবার নাম ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলু।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র শাহিন আলম জনকণ্ঠকে বলেন, "আমাদের তিনটি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে ঘটনাস্থলে কাজ করছে। শত চেষ্টা করেও নিখোঁজ নারীর সন্ধান করতে পারছি না। দেশের সেরা পাঁচ ডুবুরিও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন। আমরা জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছি জ্যোতির লাশ উদ্ধারে। ড্রেনে প্রবল পানির স্রোত এবং ড্রেনের গভীরতা বেশি হওয়ায় উদ্ধার অভিযান বারবার চ্যালেঞ্জে পড়ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের কোন কমতি না থাকলেও জ্যোতিকে উদ্ধারে তারা কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না।
জ্যোতি ঢাকা মিরপুরের মনি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ওষুধের প্রতিষ্ঠানে রিপ্রেজেনটেটিভ কেমিস্ট হিসাবে চাকরি করতেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে টঙ্গী হোসেন মার্কেটের ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ডাক্তার ভিজিট শেষে বাসায় ফেরার পথে হাসপাতালের সামনের ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি। জ্যোতি রাজধানীর মিরপুরে ১০ নং সেক্টরে বসবাস করতেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন হোসেন মার্কেটে ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনের ফুটপাতের খোলা ম্যানহোলে পড়ে জ্যোতির নিখোঁজের ঘটনায় এলাকাবাসী গাজীপুর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষছেন। তারা বলছেন, ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকলে ড্রেনে পড়ে মানুষ নিখোঁজের এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারের পথে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটির নানা স্থান উন্মুক্ত। ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের পথ চলতে হয়।
স্থানীয়রা জানায়, টানা বৃষ্টির মধ্যে গন্তব্যে ফেরার পথে ওই নারী হোসেন মার্কেট এলাকায় ঢাকা ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সামনে খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান। পানির তীব্র স্রোতে তিনি মুহূর্তেই তলিয়ে যান। স্থানীয়রা প্রাথমিকভাবে উদ্ধারে চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের পাশের ১২ ফুট প্রশস্ত ড্রেন সংকুচিত করে ৬ ফুটে নামিয়ে আনা হয়েছে, যার ফলে বর্ষা মৌসুমে চরম জলাবদ্ধতায় ড্রেন পানির নিচে তলিয়ে যায়। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা মহাসড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’
সাব্বির