ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

দক্ষিণ কোরিয়াকে পাত্তাই দিল না কিম জং উনের বোন!

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ২৮ জুলাই ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়াকে পাত্তাই দিল না কিম জং উনের বোন!

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার প্রভাবশালী নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন উদারপন্থী সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার “অন্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা” ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি তাদের শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান আগের রক্ষণশীল সরকারের মতোই।

বিশ্লেষকদের মতে, কিম ইয়ো জংয়ের এ মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, উত্তর কোরিয়া—যেটি বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার প্রসারে ব্যস্ত—নিকট ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতি পুনরায় শুরু করতে আগ্রহী নয়। তিনি হয়তো সিউল ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ফাটল ধরানোর কৌশল হিসেবে এমন বক্তব্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে কিম ইয়ো জং বলেন, “আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানাতে চাই, সিউলে যাই নীতি নেওয়া হোক না কেন বা যাই প্রস্তাব দেওয়া হোক না কেন, তাতে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের দেখা করার কোনো কারণ নেই এবং আলোচনার কোনো বিষয়ও নেই।”

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সরকারের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া। জুনের শুরুতে ক্ষমতায় আসা এই সরকার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছিল।

লি’র প্রশাসন সীমান্তে উত্তর কোরিয়াবিরোধী লাউডস্পিকার প্রচার বন্ধ করেছে, বেলুনে করে প্রচারপত্র পাঠানো বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দক্ষিণে ভেসে আসা উত্তর কোরীয়দের ফেরত পাঠিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার অভিযোগ: যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া

২০১৯ সালে কিম জং উন ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের পারমাণবিক আলোচনার ব্যর্থতার পর থেকে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এড়িয়ে চলছে। এরপর থেকে তারা আরও শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে মনোযোগী হয়েছে এবং কোরীয় উপদ্বীপে “শত্রুভাবাপন্ন দ্বি-রাষ্ট্র” ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

কিম ইয়ো জং লি জে মিয়ং সরকারের কিছু পদক্ষেপকে “সদিচ্ছার প্রয়াস” বলে উল্লেখ করলেও বলেন, এই সরকার এখনো “উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাতের পথেই” আছে। তিনি আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়ার কথাও উল্লেখ করেন, যা উত্তর কোরিয়া বরাবরই আগ্রাসনের মহড়া বলে দাবি করে।

লি বলেন, কোরিয়া দু’দেশের মধ্যে আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা জরুরি। তিনি এই বিষয়ে পুনঃএকত্রীকরণ বিষয়ক মন্ত্রী চুং ডং ইয়ংয়ের মতামত জানতে চান। মন্ত্রী পরে জানান, তিনি প্রেসিডেন্টকে প্রস্তাব দেবেন যেন দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ মহড়া কিছুটা “সমন্বয়” করে—যাতে উত্তর কোরিয়াকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনা যায়।

তবে এই মন্তব্য রক্ষণশীলদের কাছ থেকে কড়া সমালোচনা ডেকে আনবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ তারা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যক্রম মোকাবেলায় এই মহড়ার প্রসার সমর্থন করে।

বিশ্লেষণ: উত্তর কোরিয়া চায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা ত্যাগ করুক দক্ষিণ কোরিয়া

সিউল-ভিত্তিক কোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজির বিশ্লেষক মুন সেওং মুক বলেন, কিম ইয়ো জংয়ের বক্তব্য স্পষ্ট করে যে উত্তর কোরিয়া চায় দক্ষিণ কোরিয়া যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট ত্যাগ করে।

মুন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে উত্তর কোরিয়ার জন্য আগের মতো কোনো আর্থিক লাভ নেই, যতদিন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক প্রসারে মনোযোগ পিয়ংইয়ংয়ের

উত্তর কোরিয়া এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ সহায়তার জন্য সৈন্য ও প্রচলিত অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং বিনিময়ে অর্থনৈতিক ও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকে কিম জং উনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা পুনরায় উল্লেখ করে কূটনীতি শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে উত্তর কোরিয়া এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সিউলে ইওহা উইমেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইফ-এরিক ইজলি বলেন, কিম ইয়ো জংয়ের এই বিবৃতি মূলত অভ্যন্তরীণ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে।

তিনি বলেন, “তিনি উত্তর কোরিয়াকে একটি গর্বিত অবস্থানে দেখাতে চান—যা অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও নিজের অস্তিত্ব জারি রেখেছে। এ ছাড়া, তিনি তাদের অস্ত্র কর্মসূচি বৈধতা দিতে এবং দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতেই এমন মন্তব্য করেছেন।”

তবে রাশিয়া থেকে উত্তর কোরিয়া কতটা পাবে তা সীমিত, এবং তারা আসন্ন জানুয়ারিতে ওয়ার্কার্স পার্টির বড় কোনো বৈঠকে কৌশল পরিবর্তনের দিকেও যেতে পারে বলে মনে করছেন ‘ওয়ান কোরিয়া সেন্টার’-এর প্রধান কওয়াক গিল সপ।

তিনি বলেন, “আমার ধারণা, উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে Plan B ও Plan C তৈরি করছে।”

 

তথ্যসূত্র: এপি নিউজ

আবির

×