
ছবি - জনকণ্ঠ
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর, কাফিলা, পুয়াউটা—এই তিন গ্রামের মানুষ বছরের পর বছর বর্ষা মৌসুমে চরম দুর্ভোগে পড়েন। বর্ষা এলেই পানিতে ডুবে যায় এই এলাকার প্রধান সড়ক। ফলে গ্রামবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা।
তিন গ্রামের প্রধান সড়ক বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগী, বৃদ্ধ ও কর্মজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে প্রতিদিন নৌকা ব্যবহার করেন। অনেকে আবার হাঁটু কিংবা কোমর পর্যন্ত পানির মধ্যে দিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হন।
যুগের পর যুগ ধরে এই সমস্যা চললেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। যে কারণে গ্রামীণ এই মাটির সড়কটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া যেমন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, তেমনি রোগী পরিবহনের সময় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
এই তিন গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন এই ডুবে যাওয়া সড়ক দিয়ে। কখনো কোমর পর্যন্ত পানি, কখনো হাঁটুসমান পানির মধ্যে দিয়ে। তবে অধিকাংশই যাতায়াত করেন নৌকায়। মাঝেমধ্যেই তারা সড়কের মধ্যে পড়ে গিয়ে ভিজে যান—যে কারণে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। সড়কের এই বেহাল দশার কারণে এই এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
এছাড়াও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার কৃষকরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তাদের কৃষি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ করতে হয় মাথায় করে বয়ে নিয়ে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, “আমাদের স্কুলে আসতে খুবই কষ্ট হয়। নৌকায় চড়ে স্কুলে আসি। কখনও কখনও বইখাতা, কখনও আমরা নিজেরাও ভিজে যাই। তাছাড়া সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্তে পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে।”
কৃষ্ণনগর গ্রামের হাসান শরিফ জানান, “আমাদের এই সড়কের খবর কেউ নেয় না। বর্ষা মৌসুমে আমাদের গ্রামে নৌকা ব্যবহার করতে হয়। আমাগো নৌকা ছাড়া উপায় নাই, এখন নৌকাই আমাগো রাস্তা। হঠাৎ করে কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিন নৌকায় চড়িয়ে স্কুলে নিতে হয়।”
স্থানীয় ইউনুস মৃধা জানান, “শৈশব থেকে দেখে আসা যাতায়াতের কষ্ট যেন শেষ হয়নি আজও। আমাদের জীবন অনেক কষ্টের। বাজার-সদাই থেকে শুরু করে চিকিৎসা, শিক্ষা—সবকিছুর জন্যই আমাগো পাড়ি দিতে হয় কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা সড়কে। আর এতে আমাদের একমাত্র বাহন হলো ডিঙি নৌকা। এক কথায়, আমাদের জীবন নির্ভর করে ছোট্ট ডিঙি নৌকার ওপর।”
কৃষ্ণনগর ও হাসাননগর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. আলম হোসেন বলেন, “উপজেলার প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকা নিয়ামতি ইউনিয়নের আওতাধীন বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কৃষ্ণনগর, হাসাননগর, কাফিলা, পুয়াউটা—এই তিন গ্রামের একমাত্র সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকায় বর্ষা মৌসুমে এখানে শিক্ষার্থীদের নৌকা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের কোনো মাধ্যম নেই। যদি সরকার রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হয়, তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সার্বিক উন্নয়নের পথ তৈরি হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, “পরবর্তী সরকারি কোনো বরাদ্দ পেলে প্রথমে কৃষ্ণনগর সড়ক সংস্কার করা হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আফরোজ বলেন, “সড়কটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। এবং আমাদের যদি সরকারিভাবে প্রকল্প নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে অবশ্যই বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
ইমরান