ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বের দ্বিতীয় মরণব্যাধি হেপাটাইটিস! টিকা ছাড়া আপনি কতটা নিরাপদ?

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৮ জুলাই ২০২৫

বিশ্বের দ্বিতীয় মরণব্যাধি হেপাটাইটিস! টিকা ছাড়া আপনি কতটা নিরাপদ?

ছবি: সংগৃহীত।

প্রতি বছর ২৮ জুলাই পালিত হয় বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো-ভাইরাল হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, যা লিভারের প্রদাহজনিত রোগ এবং ভয়াবহভাবে লিভার ক্যান্সার ও লিভার ফেইলিওরের কারণ হতে পারে। এবারের প্রতিপাদ্য “Hepatitis: Let’s Break It Down”-এই বার্তার মাধ্যমে হেপাটাইটিসের সঙ্গে জড়িত সামাজিক ও আর্থিক স্টিগমা ভেঙে ফেলতে ও তা নির্মূলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০২২ সালের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৩০৪ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস-বি ও সি-তে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে আছেন এবং শুধু ২০২২ সালেই হেপাটাইটিসে ১৩ লাখ মানুষ মারা গেছেন।

WHO দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ইনচার্জ ডা. ক্যাথারিয়া বেয়োমে বলেন, “ভাইরাল হেপাটাইটিস এখনও হাজারো নিরীহ মানুষের নিঃশব্দে ভোগান্তির কারণ হয়ে আছে। এটি লিভারে আক্রমণ করে ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ঘটায়।” তিনি আরও জানান, “এই অঞ্চলে আনুমানিক ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস-বি এবং ৯০ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস-সি-তে আক্রান্ত। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জানেই না যে তারা এই ভাইরাস বহন করছে, ফলে চিকিৎসাও নিচ্ছে না।”

বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স-এর মতে, কোভিড-১৯ এর পর হেপাটাইটিস বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী ভাইরাস। এটি লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবেও চিহ্নিত।

হেপাটাইটিস কী?
হেপাটাইটিস মূলত লিভারের প্রদাহজনিত রোগ, যা ভাইরাস বা নন-ইনফেকশাস উপাদান দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। এটি মারাত্মক লিভার ড্যামেজ, সিরোসিস ও ক্যান্সারের কারণ হয়ে ওঠে। ভাইরাসটির প্রধান পাঁচটি ধরন হলো-হেপাটাইটিস A, B, C, D ও E। এর মধ্যে B ও C টাইপ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ ঘটায় এবং মৃত্যুর হারও বেশি।

হেপাটাইটিসের প্রাথমিক উপসর্গসমূহ:
অনেক সময় উপসর্গ না-ও দেখা দিতে পারে, তবে প্রধান লক্ষণগুলো হলো: জ্বর, দুর্বলতা ও অবসাদ, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, বমিভাব ও ডায়রিয়া, পেটের অস্বস্তি বা ব্যথা চোখ ও শরীর হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), গাঢ় রঙের প্রস্রাব, বিশেষ করে হেপাটাইটিস-B, C ও D লিভারে দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ ঘটিয়ে সিরোসিস বা ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।

হেপাটাইটিস-বি থেকে কিভাবে সুরক্ষা পাবেন?
হেপাটাইটিস-বি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা লিভারে আক্রমণ করে। এটি আকস্মিকভাবে (অ্যাকিউট) বা দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) হতে পারে। এর প্রতিরোধে একটি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা রয়েছে, যা সাধারণত জন্মের পরপরই ও কিছু সময় পর বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়। এই ভ্যাকসিন প্রায় ১০০% সুরক্ষা দিতে পারে।

ছড়িয়ে পড়ার উপায়:
মা থেকে সন্তানের মধ্যে জন্মের সময়, শিশু থেকে শিশুর মধ্যে (বিশেষ করে প্রথম ৫ বছরে), আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, থুথু, মেনস্ট্রুয়াল, যৌন ও অন্যান্য শরীরবৃত্তীয় তরল দ্বারা, ইনজেকশন, উল্কি (ট্যাটু), পিয়ার্সিং বা চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত সংক্রমিত সূঁচ ও যন্ত্রপাতি, যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে (বিশেষত একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে এবং টিকা না নেওয়া হলে)।

সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা:
হেপাটাইটিস-বি নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, কারণ এর উপসর্গ অন্যান্য হেপাটাইটিসের মতোই হতে পারে। WHO এর সুপারিশ অনুযায়ী, উচ্চ সংক্রমণ প্রবণ অঞ্চলের মানুষ, গর্ভবতী নারী, রক্তদাতা ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্ক্রিনিং করা উচিত। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৩% সংক্রমিত ব্যক্তি জানেন যে তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, এবং মাত্র ৩% চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হেপাটাইটিস-বি সংক্রমিতদের মধ্যে ১% HIV সংক্রমণও থাকে, তবে HIV চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-বি তেও কার্যকর।

সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি:
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে জীবনযাপন করছেন, যা এক গভীর জনস্বাস্থ্য সংকট। এর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা, টিকাদান ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। এককভাবে নয়, এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সম্মিলিত বৈশ্বিক পদক্ষেপ।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×