ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ফ্লোরিডায় দত্তক নেওয়া শিশুদের আটকে রেখে নির্যাতন, নির্মমতা বর্ণনা করল পুলিশ

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৩, ২৮ জুলাই ২০২৫

ফ্লোরিডায় দত্তক নেওয়া শিশুদের আটকে রেখে নির্যাতন, নির্মমতা বর্ণনা করল পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেখানকার কলম্বিয়া কাউন্টির একটি বাড়িতে দত্তক নেওয়া ৯ শিশুকে খাঁচার মতো জায়গায় আটকে রাখা হতো, মুখে ছিটানো হতো ভিনেগার, দেওয়া হতো অবৈধ ওষুধ। এমন মর্মান্তিক নির্যাতনের অভিযোগে এক পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ব্রায়ান ম্যাথু গ্রিফেথ (৪৭), জিল এলিজাবেথ গ্রিফেথ (৪১), ড্যালিন রাসেল গ্রিফেথ (২১) ও লিবার্টি অ্যান গ্রিফেথ (১৯)। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।

গোপন নির্যাতনের ভেতরের চিত্র

শিশুদের ওপর চালানো এই অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে গত ৩ জুলাই, ফ্লোরিডার ফোর্ট হোয়াইট এলাকায় একটি মোবাইল হোমে। কলম্বিয়া কাউন্টি শেরিফ অফিস জানায়, ওই বাড়িতে ৩টি শোবার ঘর ও ২টি বাথরুম থাকলেও সেখানে ৯ জন শিশুকে অমানবিকভাবে রাখা হতো।

শিশুগুলোর মধ্যে পাঁচজন পরিবারের জৈবিক সন্তান, আর বাকি চারজন আরিজোনার একটি বেসরকারি প্রক্রিয়ায় দত্তক নেওয়া শিশু। বয়স ৭ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে।

গির্জার ক্যাম্পেই ধরা পড়ে মূল কাহিনি

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন একটি গির্জার ক্যাম্পে একটি শিশু একটি ইলেকট্রিক স্টান গান বহন করছিল—যা একজন গির্জা কর্মকর্তার সন্দেহের উদ্রেক করে। ব্রায়ান গ্রিফেথ দাবি করেন, এটি নকল খেলনা। তবে পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি সত্যিকারের স্টান গান।

এরপর পুলিশ যখন ওই বাড়িতে ওয়েলনেস চেক করতে যায়, তখন দেখা যায়, পরিবারটির দত্তক নেওয়া চার শিশু গৃহকর্মে ব্যস্ত, আর জৈবিক সন্তানরা খেলা করছে কিংবা টিভি দেখছে।

নির্মম কৌশলে বন্দিত্ব

অভিযুক্তরা শিশুদের বাঙ্ক বেডের নিচে প্লাইউড ঠুকে আটকে রাখত যাতে তারা পালাতে না পারে। ভিনেগার ছিটিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো, এবং কখনো কখনো অবৈধ ওষুধ খাওয়ানো হতো। জিল গ্রিফেথ একজন শিশুকে মেঝেতে শুইয়ে তার উপর শক্ত প্লাইউড চাপিয়ে ধরতেন, যাতে ছেলেটি যন্ত্রণা ও কাঠের কাঁটা দ্বারা আহত হয়।

ব্রায়ান গ্রিফেথ শিশুদের লাঠি দিয়ে মারতেন, কিন্তু এমনভাবে, যেন চিহ্ন না থাকে—পুলিশ এমনটিই জানায়।

শিক্ষাবঞ্চিত ও নির্যাতনের বর্ণনা

১৪ বছর বয়সী এক কিশোর বলেন, তাকে প্রায় প্রতিদিন বাঙ্ক বেডের নিচে আটকে রাখা হতো, সকাল-রাতের অধিকাংশ সময় সেখানেই কাটাতে হতো। মাঝেমধ্যে শুধু দুপুর ও রাতের খাবারের সময় বের হতে দেওয়া হতো, কিংবা খেলাধুলা করার সময়। রাতের বেলা বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না—তাকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।

এক কিশোরী বলেন, তিনি নিরক্ষর—কারণ দীর্ঘদিন স্কুলে যাননি। এমনকি আরেক শিশু জানায়, সে নিজের জন্মদিনও জানে না।

আরও ভয়াবহ অভিযোগ

আরেকজন দত্তক নেওয়া কিশোরী ২০২৪ সালে পরিবারটির সঙ্গে ফ্লোরিডায় আসার পর মায়ের কাছে ফোন করে বাঁচাতে অনুরোধ করে। পরবর্তীতে তাকে আরিজোনায় নিজের জৈবিক পরিবারের কাছে নিরাপদে পাওয়া যায়। তবে ওই মেয়ের মা দাবি করেন, গ্রিফেথ পরিবারের একজন সদস্য তার সন্তানকে যৌন নির্যাতন করেছে—এমন অভিযোগও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইনগত ব্যবস্থা ও তদন্ত

চার অভিযুক্ত বর্তমানে কলম্বিয়া কাউন্টি ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের জামিন ধার্য হয়েছে ৫ লাখ ডলার, তবে জিল গ্রিফেথের জামিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ ডলার।

শিশুরা বর্তমানে ফ্লোরিডা শিশু ও পরিবার সেবা বিভাগের হেফাজতে রয়েছে। চাইল্ড প্রোটেকশন টিম সকল শিশুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে এবং তারপরই গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের।

 

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 

রাকিব

আরো পড়ুন  

×