
ছবি: সংগৃহীত।
সীমান্ত সংঘাতের পঞ্চম দিনে মালয়েশিয়ায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় বসেছেন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নেতারা। সোমবার (২৮ জুলাই) দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশ নেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাই। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতেরাও।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই প্রতিবেশী দেশ দুটি গত সপ্তাহ থেকে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। উভয় দেশই একে অপরকে সংঘাত শুরুর জন্য দায়ী করছে। সংঘর্ষে ভারী গোলাবর্ষণ ও থাই বিমান হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে জানান, “এই আলোচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগেই এই আলোচনার সূচনা হয়েছে, যা কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় অনুমোদন করেছেন।”
হুন মানেত যে ছবি শেয়ার করেছেন, তাতে দেখা যায়-বৈঠকে ইউ-আকারে বসার ব্যবস্থায় এক পাশে তিনি ও অন্য পাশে থাই প্রধানমন্ত্রী। মাঝে প্রধান টেবিলে ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ছিলেন পেছনের টেবিলে।
গত বৃহস্পতিবার সীমান্ত সংঘাত শুরু হওয়ার পরপরই আনোয়ার ইব্রাহিম যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রস্তাব দেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রও আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর জন্য সহায়তা দিতে চায় বলে জানায়।
প্রসঙ্গত, মে মাসের শেষদিকে একটি ছোটখাটো সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে উভয় দেশ সীমান্তে সেনা সমাবেশ জোরদার করেছে। কূটনৈতিক সংকটের কারণে থাইল্যান্ডের জোট সরকার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন-যতক্ষণ না সংঘাত বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি কোনও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না।
আলোচনার আগে থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম বলেন, “আমরা কম্বোডিয়ার ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। তারা এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার অভাব স্পষ্ট।” তিনি আরও বলেন, “কম্বোডিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। তবে সবাই শান্তি চায়, সহিংসতা নয়। কারণ এতে নিরীহ নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
অন্যদিকে, কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা বেসামরিক এলাকায় হামলা করেনি, বরং থাইল্যান্ডই নিরীহ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে থাইল্যান্ডের আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া।
আলোচনার ঘোষণা সত্ত্বেও সোমবার সীমান্ত এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ডের সিসাকেট প্রদেশে রয়টার্সের সাংবাদিকরা একটি পরিত্যক্ত গ্রামে গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত একটি বাড়ি দেখতে পান। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে বৈদ্যুতিক তার ঝুলে ছিল, জানালার কাঁচ ভাঙা, চারপাশে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিল। আশপাশের দোকানপাট ও রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ, কেবল কয়েকটি সেনাবাহিনী বাহন ও ট্যাংক চলাচল করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে গোলার শব্দে এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উপস্থিতি, দুই দেশকেই আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করেছে। তবে মাঠপর্যায়ে সংঘর্ষ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বাস্তব রূপ পাবে কি না-তা নিয়েই সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স।
মিরাজ খান