ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মির্জা ফখরুল

চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৮ জুলাই ২০২৫

চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না

জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সোমবার যুবদলের গ্রাফিতি অংকন উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 
সোমবার সকালে শাহবাগ চত্বরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যুবদল আয়োজিত ‘গ্রাফিতি অংকন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। পরে তিনি রংতুলি নিয়ে গ্রাফিতি আঁকার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা প্রতি মুহূর্তে সংস্কারের কথা বলছেন, পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন, আমরা কমপ্রোমাইজ করছি না এমন কথাগুলো বলছেন, তা সঠিক নয়। আমরা সারাক্ষণ এই সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি, আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। আজ আমাদের সামনে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, আমরা সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। 
মির্জা ফখরুল বলেন, একটা স্লোগান দিয়েছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এটার অর্থ কী? এটার অর্থ আমরা কারও কাছে মাথানত করব না, আমরা অন্য কোনো দেশের দিকে তাকিয়ে থাকি না। তাই পরিষ্কার করে বলতে চাই, আজ যারাই চেষ্টা করুন না কেন, বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, সেই চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। দেশের মানুষ লড়াই করেছে, লড়াই করতে জানে, লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছে, লড়াই করে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে এবং দেশকে মুক্ত করেছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আমাদের শহীদদের- যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আজ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যুবদল, ছাত্র দল, বিএনপির দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। তাই আমরা সেই দিকে এগিয়ে যাই, যে পথে এগুলে আমরা মানুষকে সুন্দর একটা বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব।
গত ১৫ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আমাদের অনেকের ওপর কি নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে তাদের ছবি তো আমাদের সাংবাদিকরা ছাপে না। প্লিজ সাংবাদিক ভাইদের বলব, কালোকে কালো বলবেন সাদাকে সাদা বলবেন এবং যার যা অবদান আছে সেই অবদানকে স্বীকার করবেন। শত অত্যাচারের মুখেও আমরা কেউ মুচলেকা দেইনি।
ফখরুল বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে যুব দলের ৭৯জন শহীদ হয়েছেন, ছাত্র দলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছেন,  গোটা বাংলাদেশে সেদিন আমরা নেমে এসেছি। শুধুমাত্র কয়েকটি দল, কয়েকজন ছাত্র নয়, শিশু থেকে শুরু করে নব্বই বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল। এই যে ত্যাগ, আমরা ২ হাজারের ওপরে মানুষ হারালাম, ছেলেদের হারালাম, আমাদের নেতা-কর্মীরা পঙ্গু হলো, চোখ হারাল তার একটাই তো লক্ষ্য- ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, একটা ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৫ সমন্বয়কারী গ্রেপ্তারের ঘটনায় বেদনায় নীল হয়ে গেছি। তারা জোর করে একটি বাড়ি থেকে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিয়েছে। এই পরিণতি কি আমরা চেয়েছিলাম? বাংলাদেশের মানুষ কী এটা চেয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি যদি এই ঘটনা ঘটে একবছরও হয়নি তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? এই কথাগুলো এ জন্য বলছি, গোটা বাংলাদেশ তোমাদের দিকে চেয়ে আছে।

তরুণ-যুবক যারা বদলে দিয়েছে, যারা পাল্টে দিয়েছে সেই হাসিনার ক্ষমতার পতন ঘটিয়ে তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে, তাদেরই তো এদেশ গড়ে তুলতে হবে, তাদেরই তো এদেশ নির্মাণ করতে হবে, তাদের ভবিষ্যতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, মানবতার ভিত্তিতে।
ফখরুল বলেন, দুঃখ হয় আমাদের যখন আমরা দেখি যে, এক বছর সময়ের মধ্যেও আমরা এ কথা জোর গলায় বলতে পারছি না যে, আমরা তৈরি হয়ে গেছি এদেশ আমরা নতুন করে গড়ে তুলব। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব সেই সুদূর লন্ডন থেকে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন, আমাদের আন্দোলনে নামিয়ে ফ্যাসিস্টদের পতন করে এখন তিনি চেষ্টা করছেন দেশকে কী করে গড়ে তোলা যায়।
ফখরুল বলেন, একটা কথা আছে ইংরেজিতে পাবলিক পারসেপশন। এটাই কিন্তু রাজনীতির মূল নিয়ামক। জনগণ কী ভাবছে? এই যে আমার ভাই ওখানে ভ্যানে ফল বিক্রি করছেন, ওই যে আমার ভাই রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিক্সা চালাচ্ছেন অথবা আমার ভাই যিনি সবজি বিক্রি করছেন তিনি কী ভাবছেন? আপনারা কি কখনো তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ভাই যুদ্ধ তো একটা হয়ে গেল আমরা হাসিনাকে তাড়ালাম এই যে গ্রাফিতি করছি, বড় বড় বই ছাপাব, আপনার মতামতটা কী? বাংলাদেশের পরিবর্তনটা কী হলো? জিজ্ঞাসা করেন তাকে।
যদি সত্যিকার অর্থে এই দেশকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, সে কী চায়? আমার ভ্যান চালক কী চায় তার অবস্থার কতটা পরিবর্তন হয়েছে? আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার ব্যবসার কতটা পরিবর্তন হয়েছে। আজকে এই কথাগুলো বলছি এজন্য যে, আজকে এর প্রয়োজন এসে গেছে।
হাসিনার বিচার শুরু হলো না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, এক বছর হয়ে গেল তার বিচার কাজ শুরু হলো না। এখনো হাসিনা নির্দেশ দিচ্ছে গুলি করার। প্লিজ এই বিষয়গুলোকে সাংবাদিক ভাইয়েরা দয়া করে সামনে নিয়ে আসেন। এই সাংবাদিকরা আপনারা অত্যন্ত ভালো কাজ করেছেন, অনেক কিছু দিয়েছেন, অনেকে এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, আপনারা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অধিকারের আন্দোলনে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, লড়াই করেছেন।
ফখরুল বলেন, আমরা এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছি, এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি যা বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে দিতে পারে। ফ্যাসিস্টদের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে আবার নতুন করে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। 
অসুস্থ বদরুদ্দীন ওমরকে দেখতে হাসপাতালে ফখরুল ॥ তাত্ত্বিক লেখক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন ওমরের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সেমবার দুপুরে ওই হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি বদরুদ্দিন ওমরের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানেন।

তিনি অসুস্থ প্রবীণ এই নেতার শয্যার পাশে কিছু সময় অবস্থান করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও প্রবীণ এই নেতার আশু রোগমুক্তি কামনায় দোয়া করা হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

প্যানেল হু

×