ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বাড়ি কিনলেই পাসপোর্ট! ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগে বাড়ছে আগ্রহ

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১০:৫৯, ২৮ জুলাই ২০২৫

বাড়ি কিনলেই পাসপোর্ট! ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগে বাড়ছে আগ্রহ

ছবিঃ সংগৃহীত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাড়ি কেনা মানেই এখন শুধু সমুদ্রতট বা নিরিবিলি জীবনযাপন নয়—সঙ্গে মিলছে নাগরিকত্ব ও পাসপোর্টও। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশের ধনীরা এখন নাগরিকত্বের বিনিময়ে বিনিয়োগ (CBI) কর্মসূচির দিকে ঝুঁকছেন।

অ্যান্টিগা ও বার্বুডা, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া—এই পাঁচটি পূর্ব ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র এখন নাগরিকত্বের বিনিময়ে বাড়ি কেনার সুযোগ দিচ্ছে। মাত্র ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলেই মিলছে ঐ দেশের পাসপোর্ট, যা দিয়ে ১৫০টিরও বেশি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যায়, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের শেংগেন অঞ্চলের দেশগুলো।

মার্কিন ধনীদের ভিড় অ্যান্টিগায়
অ্যান্টিগার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী নাদিয়া ডাইসন বলেন, “বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্রেতাই নাগরিকত্ব চান এবং তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন।” তিনি জানান, এক সময় যারা কেবল সমুদ্র তীরের জীবন উপভোগ করতে চাইতেন, এখন তারাই বলছেন—“আমাকে একটা নাগরিকত্বসহ বাড়ি দিন।”

ক্যারিবীয় অঞ্চলে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষ আবেদনকারী দেশ। এছাড়াও ইউক্রেন, নাইজেরিয়া, তুরস্ক এবং চীন থেকেও বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে। হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামে আন্তর্জাতিক মাইগ্রেশন পরামর্শ সংস্থা বলছে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে এই কর্মসূচিতে ১২% আবেদন বেড়েছে।

‘ব্যাকআপ প্ল্যান’ হিসেবে দ্বিতীয় পাসপোর্ট
হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসের ডমিনিক ভোলেক বলেন, “অনেক ধনী মানুষ দ্বিতীয় পাসপোর্টকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ আসলে বসবাস করেন না, শুধু সঙ্কটের সময় বিকল্প পথ হিসেবে এটি ব্যবহার করতে চান।”

করোনাকালে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অনেক ধনীর চোখ খুলে দেয়, যারা আগে ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করতেন। এরপর ২০২০ ও ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে, যার প্রেক্ষাপটে নাগরিকত্ব কেনার প্রবণতা বেড়ে যায়।

সমালোচনাও আছে
যদিও অনেকেই এই উদ্যোগকে অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনার পথ হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ নাগরিকত্বকে “বিক্রয়যোগ্য পণ্য” বানানোর সমালোচনা করছেন। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিনসের প্রধানমন্ত্রী রালফ গনসালভেস বলেন, নাগরিকত্ব বিক্রি করা কোনো জাতির সম্মানজনক কাজ নয়।

তবে ডোমিনিকার প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিট বলেন, তাদের কর্মসূচি স্বচ্ছ এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে চলে। এই কর্মসূচি থেকে পাওয়া অর্থে ১৯৯৩ সাল থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়েছে যা ব্যবহার করা হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, হাসপাতাল নির্মাণসহ জরুরি সেবা খাতে।

আন্তর্জাতিক চাপ ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই কর্মসূচির জন্য দ্বীপগুলোর ভিসা-মুক্ত সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এই কর্মসূচিকে কর ফাঁকি ও অর্থপাচারের সম্ভাব্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে সতর্কতা জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দ্বীপ দেশগুলো এখন একটি আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে কঠোর নিরাপত্তা যাচাই, বাধ্যতামূলক সাক্ষাৎকার, নিয়মিত নিরীক্ষা এবং ডিনায়েল-লুপহোল বন্ধ করার নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জীবন বদলে দেওয়া নাগরিকত্ব
কানাডার হ্যালিফ্যাক্স থেকে আসা রবার্ট টেলর অ্যান্টিগায় ২ লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেছেন। তিনি জানান, “এই নাগরিকত্ব আমাকে শুধু দীর্ঘমেয়াদে থাকার সুযোগই দেয়নি, বরং ব্যবসার নতুন পথও খুলে দিয়েছে।”

এই কর্মসূচি বর্তমানে দ্বীপ দেশগুলোর মোট জিডিপির ১০–৩০ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখে। অনেক দেশেই জনসাধারণ এই কর্মসূচিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে, কারণ তারা বুঝতে পেরেছে এটি অর্থনীতিতে কতটা সহায়ক।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×