ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ক্যানসারের ওষুধ

প্রকাশিত: ০৯:৫০, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:৫২, ২৮ জুলাই ২০২৫

নতুন রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত ক্যানসারের ওষুধ

ছবি: প্রতীকী

নতুন রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ক্যানসার ওষুধ

একটি যুগান্তকারী রাসায়নিক আবিষ্কার ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ওষুধ তৈরির পথ আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলতে পারে—এই দাবি করেছেন ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা। নতুন এই পদ্ধতিতে জটিল রাসায়নিক যৌগের গঠন একদম উল্টে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের ওষুধকে আরও শক্তিশালী ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন করে তুলবে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নাল Nature-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সাধারণ একটি রাসায়নিক উপাদান যোগ করে বিজ্ঞানীরা ওষুধ তৈরির মূল যৌগটির ‘ডান-হাতি’ গঠনকে ‘বাম-হাতি’ আকৃতিতে রূপান্তর করতে পেরেছেন। এই পরিবর্তনই ওষুধের কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রাকে বদলে দিতে পারে।

গবেষক দলের প্রধান ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের সিন্থেটিক কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ভারিন্দার আগারওয়াল বলেন, “এই আবিষ্কার আমাদের জৈব যৌগের মৌলিক রসায়ন নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। এর ফলে ব্রেস্ট ক্যানসারের জন্য ব্যবহৃত ‘ট্যামক্সিফেন’-এর বিকল্প ওষুধ তৈরি সম্ভব, যেগুলোর কার্যকারিতা বেশি হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকবে।”

কঠিন যৌগ তৈরিতে নতুন কৌশল

গবেষকরা বিশেষ ধরনের রাসায়নিক যৌগ—‘টেট্রাসাবস্টিটিউটেড আলকিন’—নিয়ে কাজ করেছেন, যেগুলো সাধারণত তৈরি করা খুবই কঠিন। কিন্তু এই যৌগ ক্যানসার প্রতিরোধী ওষুধ, প্রাকৃতিক তেল এবং অন্যান্য জৈবপণ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

প্রথমে তারা প্রচলিত বোরোনিক এস্টার ব্যবহার করে সাফল্য পাননি। এরপর অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত বোরান-ভিত্তিক যৌগ দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হন। এ নিয়ে অধ্যাপক আগারওয়াল বলেন, ‘এটি এমন এক কৌশল যেখানে লেগোর মত করে সহজ উপাদান দিয়ে জটিল যৌগ বানানো যায়।’

শুধু ক্যানসার নয়, সুগন্ধি তৈরিতেও সম্ভাবনা

গবেষণাটি ক্যানসার চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সুগন্ধি তৈরির ক্ষেত্রেও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তারা সুগন্ধি তেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘γ-বিসাবোলিন’ নিয়েও কাজ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট প্যাটন বলেন, ‘আমরা যখন এই প্রক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াগুলো গণনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করলাম, তখন দেখলাম—শুধু প্রতিক্রিয়ার শর্ত বদলালেই যৌগটির আকৃতি একদিকে থেকে আরেকদিকে ঘুরে যায়। এতদিন এ ধরনের প্রতিক্রিয়া আমরা দেখিনি।’

চিকিৎসা ও শিল্পে নতুন দিগন্ত

এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে ওষুধ তৈরি অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হবে বলেই আশা বিজ্ঞানীদের। গবেষকদের মতে, ট্যামক্সিফেনের মতো ওষুধের বিকল্প তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য থেরাপিউটিক ও শিল্পোন্নত যৌগ তৈরি করতেও এই কৌশল ব্যবহৃত হতে পারে।

অধ্যাপক আগারওয়াল বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি পদ্ধতি পেয়েছি, যা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অণু স্থানান্তরযোগ্য। এর ফলে ওষুধ গবেষণা ও উপাদান বিজ্ঞানে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।’

 

সূত্র: https://scitechdaily.com/new-chemistry-discovery-promises-more-effective-cancer-drugs-with-fewer-side-effects/

রাকিব

×