ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

চাঁদে আঘাত হানবে পৃথিবীর দিকে আসতে থাকা গ্রহাণু: কী হতে পারে সেই সংঘর্ষে?

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১০:১২, ২৮ জুলাই ২০২৫

চাঁদে আঘাত হানবে পৃথিবীর দিকে আসতে থাকা গ্রহাণু: কী হতে পারে সেই সংঘর্ষে?

ছবি: সংগৃহীত

যে গ্রহাণুটি একসময় পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের পথে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল, সেটিই এখন চাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে—এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা।

‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামে পরিচিত এই গ্রহাণুটি এখন টেলিস্কোপের নাগালের বাইরে সূর্যকে ঘিরে কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটি ২০২৪ সালের শেষ দিকে আবিষ্কৃত হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর, ২০৩২ সালে এটি পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল ৩.১%—ইতিহাসে যেকোনো গ্রহাণুর মধ্যে সর্বোচ্চ।

তবে পরবর্তী তথ্য বিশ্লেষণ ও জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পৃথিবী আপাতত এই বিপদ থেকে মুক্ত। কিন্তু, নতুন হিসাব অনুযায়ী এই গ্রহাণুটি চাঁদের ওপর আঘাত হানতে পারে।

NASA জানায়, সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা এখন ৪.৩%। এটি খুব বেশি না হলেও, যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হতে পারে।

চাঁদে আঘাত মানে কেমন বিপর্যয়?

গ্রহাণুটি প্রায় ৬০ মিটার বা ২০০ ফুট প্রশস্ত। এটি আঘাত হানলে চাঁদের ওপর প্রায় এক কিলোমিটার চওড়া একটি গর্ত তৈরি হতে পারে—যা ৫,০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় চন্দ্রাঘাত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সংঘর্ষে তৈরি হওয়া ধুলিকণা ও খণ্ড খণ্ড চাঁদের উপাদান ছিটকে পৃথিবীর দিকেও আসতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যে একটি উজ্জ্বল উল্কাবৃষ্টি তৈরি করবে।

তবে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করেছেন, এতে পৃথিবীর ওপর তেমন কোনো প্রত্যক্ষ ক্ষতি হবে না। কিন্তু, চাঁদে যদি তখন কোনো মহাকাশযাত্রী বা অবকাঠামো থাকে, তাদের জন্য বিপদ তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে নিচু কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানো স্যাটেলাইটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আমাদের যোগাযোগ ও ন্যাভিগেশন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলবে।

মানবজাতির পর্যবেক্ষণের বিরল সুযোগ

এধরনের ঘটনা পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যাবে, এমনকি একটি জ্বলন্ত আলোর ফ্ল্যাশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য আকাশে দৃশ্যমান থাকবে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন।

MIT-এর প্ল্যানেটারি সায়েন্স অধ্যাপক জুলিয়েন ডি উইট বলেন, ‘এই আকারের একটি গ্রহাণু চাঁদে আঘাত করলে আমরা দেখতে পারব কীভাবে এর পৃষ্ঠ প্রতিক্রিয়া জানায়। এটি গবেষণার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে এর কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন হবে কিনা। তবে বিষয়টি গ্রহ প্রতিরক্ষা ও চন্দ্র নিরাপত্তা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে বিজ্ঞানীদের।

২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণুটি এমন সময় আবিষ্কৃত হয়েছিল, যখন এটি ইতোমধ্যে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গিয়েছিল—সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় আড়ালে ছিল বলে কেউ টের পায়নি।

এ ধরনের ‘সান-ব্লাইন্ড স্পট’-এ থাকা গ্রহাণু শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। তবে আগামীতে NASA-এর NEO Surveyor (২০২৭) এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির NEOMIR (২০৩০-এর দশকে) উৎক্ষেপণ হলে এমন ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণু আগেভাগে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

গ্রহাণু ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’-এর যাত্রা বিজ্ঞানের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি গবেষণার একটি বিরল সুযোগ। পৃথিবীর কক্ষপথ পেরিয়ে চাঁদের দিকে ধেয়ে আসা একটি ‘সিটি কিলার’ গ্রহাণু আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে—মহাকাশ শুধু সৌন্দর্যের নয়, সতর্কতারও ক্ষেত্র।

 

সূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×