ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ফিলিস্তিন সংকটে পাশ কাটানো মানেই যুদ্ধাপরাধে নীরব সায়: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৭, ২৮ জুলাই ২০২৫

ফিলিস্তিন সংকটে পাশ কাটানো মানেই যুদ্ধাপরাধে নীরব সায়: জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক গাজায় চলমান “নরকযজ্ঞ” বন্ধে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ার করেন, নিষ্ক্রিয়তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় পরোক্ষ সহযোগিতার শামিল হতে পারে।

ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য ফিলিস্তিন প্রশ্নে এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের প্রাক্কালে এক ভিডিও বার্তায় টার্ক বলেন, “অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে।” একই সঙ্গে তিনি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেন।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার জানান, গাজায় মানুষ ক্ষুধায় ধুঁকছে, শিশুদের অবস্থা ভয়াবহ, এবং ত্রাণ সংগ্রহে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসরায়েলের সামান্য সহায়তা প্রবেশ অনুমোদন যথেষ্ট নয়। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ, নিরাপদ চলাচলপথ, জ্বালানি সরবরাহ ও যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।

টার্ক বলেন, “এই সম্মেলন থেকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ আসতে হবে।” যারা ইসরায়েলের ওপর প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ হবে, তারা আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত বলে বিবেচিত হতে পারে।

তিনি জানান, ইসরায়েলের দখল ও পরিকল্পনা পশ্চিম তীরের দখলদারিত্ব চূড়ান্ত করার পাশাপাশি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সমান। “প্রতিদিন আমরা দেখছি ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত মানুষদের ছোট ছোট এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে,” — যা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে আরও দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

গাজাকে তিনি অভিহিত করেন “একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত দুঃস্বপ্নময় অঞ্চল” হিসেবে, যেখানে শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থারও কড়া সমালোচনা করেন।

টার্ক জানান, ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, ১,০০০ জন খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে মারা গেছেন এবং ইসরায়েলি হামলায় ৩০০-র বেশি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “গাজায় যেহেতু ইসরায়েলই অধিকৃত শক্তি, তাই খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী উপকরণ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।” পাশাপাশি তিনি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের হত্যার, বসতি উচ্ছেদের ও পানি বন্ধের নিন্দা জানান।

তিনি হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা করলেও ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়াকে মাত্রাতিরিক্ত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা প্রতিরোধে তিনি পূর্বের মতই সতর্ক করেন।

সমাপ্তিতে তিনি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সব জিম্মি ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, এবং যেখানেই ফিলিস্তিনিরা থাকুক সেখানে ত্বরিত ও ব্যাপক মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনে আইনের শাসন ও মানবাধিকারভিত্তিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।

আবির

×