
মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহ, প্রবল শুষ্ক বাতাস ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইউরোপের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। তুরস্ক, গ্রিস, আলবেনিয়া ও বুলগেরিয়াসহ বহু দেশ এখন দাবানলের কবলে। আগুন এতটাই দ্রুত ছড়াচ্ছে যে নিমেষেই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে বিশাল এলাকা ও মানুষের ঘরবাড়ি।
তুরস্কে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা ও বাতাসের তীব্র গতিতে দক্ষিণাঞ্চলের মেরসিন, আন্তালিয়া, বুরসা ও ক্যারাবুকসহ অনেক অঞ্চল দাবানলে বিধ্বস্ত হয়েছে। যদিও আন্তালিয়ার কিছু অঞ্চলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে এখনো বিপর্যস্ত বুরসার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও ক্যারাবুকের বিস্তীর্ণ বনভূমি ও বসতিপূর্ব এলাকা।
তুরস্কে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্তত ৩৬০০ জন মানুষ। দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দুই হাজারেরও বেশি ফায়ার সার্ভিস সদস্য ও অন্তত ১০টি হেলিকপ্টার। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “চোখের পলকে পুরো পাহাড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ল। বাতাসের গতির কারণে মুহূর্তেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
এদিকে প্রতিবেশী গ্রিসেও দাবানলের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। দেশটির ক্রায়োনেরি, মেসিনিয়া, ইভিয়া ও এটিকা অঞ্চলে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৫২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৪৪টি নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো অন্তত ৮টি আগুন জ্বলছে বনভূমিতে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে কমপক্ষে পাঁচজনকে।
গ্রিসে আগুন নেভাতে কাজ করছে ১৪৫ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ৪৪টি উদ্ধার যান এবং ৭টি হেলিকপ্টার। আগুনে ঘরবাড়ি হারানো একজন বাসিন্দা জানান, “আমাদের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি ভয়ে। উদ্ধারকারী দল সময়মতো না এলে কী হতো, ভাবতেই পারি না।”
দাবানলের দগ্ধতা থেকে বাঁচতে হিমশিম খাচ্ছে আলবেনিয়া ও বুলগেরিয়াসহ ইউরোপের আরও অনেক দেশ। কোথাও আগুন নেভানোর পাশাপাশি চলছে উদ্ধার কার্যক্রম, আবার কোথাও সাধারণ মানুষ নিজেরাই নেমে পড়েছে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।
এই দাবানলের প্রকৃতি ও বিস্তার পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন কেবল ভবিষ্যতের আশঙ্কা নয়, এটি এখনকার বাস্তবতা।
Jahan