
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লটের ওপর ভয়াবহ সাইবার হামলার দাবি করেছে ইউক্রেনপন্থী একটি হ্যাকিং গ্রুপ। এতে সোমবার (২৮ জুলাই) দেশজুড়ে অন্তত ৪০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয় সংস্থাটি।
মস্কোর শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরের ডিপার্চার বোর্ডে একের পর এক ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেখা যায়, যা ছুটির মৌসুমে বিপাকে ফেলেছে অসংখ্য রুশ নাগরিককে।
মস্কো উদ্বিগ্ন, তদন্ত শুরু
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং এটি যে একটি হ্যাকিংয়ের ফল, তা নিশ্চিত করেছে রুশ সরকারি প্রসিকিউটররা। এরইমধ্যে অফিশিয়াল অপরাধ তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা আন্তন গোরেলকিন বলেন, ‘আমাদের দেশকে সব দিক থেকেই যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে—ডিজিটাল ফ্রন্টও তার একটি। এই ঘটনার পেছনে এমন কিছু হ্যাকার থাকতে পারে, যারা শত্রু রাষ্ট্রের হয়ে কাজ করছে।’
‘সাইলেন্ট ক্রো’ নামের হ্যাকারদের দাবি
‘সাইলেন্ট ক্রো’ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ জানিয়েছে, তারা বেলারুশভিত্তিক সাইবার পার্টিজানস বাইও (CyberPartisans BY) নামের আরেকটি সংগঠনের সঙ্গে মিলে এই অপারেশন চালিয়েছে।
হ্যাকারদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনের গৌরব! বেলারুশ দীর্ঘজীবী হোক!’—তবে এই বিবৃতির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
তারা আরও দাবি করে, অ্যারোফ্লটের ভেতরে দীর্ঘ এক বছরের প্রস্তুতিতে চালানো এই হামলায় ৭,০০০ সার্ভার ধ্বংস করা হয়েছে, এবং কর্মীদের—এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের—ব্যক্তিগত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণও তারা পেয়েছে। তারা অ্যারোফ্লটের অভ্যন্তরীণ ফাইল ডিরেক্টরির স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছে এবং হুমকি দিয়েছে, ‘যেসব রুশ নাগরিক কখনো অ্যারোফ্লটে ভ্রমণ করেছেন, সবার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা হবে।’
পেসকভ বললেন, বড় হুমকি
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘যেসব তথ্য আমরা পাবলিক ডোমেইনে দেখছি, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জনগণের সেবা দেওয়া বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হ্যাকার হুমকি এখন বাস্তব ও স্থায়ী এক চ্যালেঞ্জ।’
অ্যারোফ্লটের অবস্থান
এখনও পর্যন্ত অ্যারোফ্লট, দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অ্যারোফ্লট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের আইটি সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৪০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বেলারুশের মিনস্ক ও আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানগামী ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে।
কমপক্ষে ১০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প ফ্লাইটে স্থানান্তর বা পরবর্তী ফ্লাইটে পুনরায় বুকিংয়ের চেষ্টা চলছে। সিস্টেম সচল হওয়ার পর ফেরত বা পুনরায় বুকিংয়ের সুযোগ দেওয়া হবে।
ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
ফ্লাইট বাতিল নিয়ে রুশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম VK-তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন যাত্রীরা।
মালেনা আশি নামের এক যাত্রী লিখেছেন, ‘আমি রাত ৩:৩০ থেকে ভোলগোগ্রাদ বিমানবন্দরে বসে আছি! ফ্লাইট তিনবার রিশিডিউল হয়েছে! এইবার বলা হচ্ছে, দুপুর ২:৫০-এ যেতে পারে, অথচ ফ্লাইট ছিল ভোর ৫টায়।’
আরেক যাত্রী ইউলিয়া পাখোতা লিখেছেন, ‘কল সেন্টার বন্ধ, ওয়েবসাইট বন্ধ, অ্যাপ কাজ করছে না। টিকিট ফেরত দেব বা পরিবর্তন করব কীভাবে?’
আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই রুশ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে নানা ধরনের বিঘ্ন ঘটে আসছে। তবে সাধারণত সেগুলো ছিল ড্রোন হামলায় বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ থাকায়। কিন্তু এবারের হামলাটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামোর ওপর সরাসরি ও গভীর আঘাত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যদিও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক রুট কমে গেছে, তবুও ৫৫.৩ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে অ্যারোফ্লট এখনো বিশ্বের শীর্ষ ২০টি এয়ারলাইনের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র: এনবিসি নিউজ।
রাকিব