
ছবি: প্রতীকী
বিশ্বে দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য জাপানিদের খ্যাতি সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের দীর্ঘ জীবন ও সুস্থ থাকার পেছনে রয়েছে সচেতন জীবনযাপন, ঘনিষ্ঠ সামাজিক বন্ধন ও সুষম খাদ্যাভ্যাস। তবে শুধু খাবার বা জীবনযাপনই নয়, জাপানি সংস্কৃতিতে এমন কিছু দর্শন রয়েছে, যা আলসেমি বা অনুৎপাদনশীলতা দূর করে জীবনকে করে তোলে অর্থপূর্ণ ও প্রেরণামূলক। নিচে থাকছে এমনই ছয়টি প্রাচীন জাপানি কৌশল—
১. ইকিগাই (Ikigai): জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজার দর্শন
‘ইকিগাই’ শব্দের অর্থ—জীবনের অর্থ বা উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া। ওকিনাওয়ায় উদ্ভূত এই দর্শন অনুসারে, দীর্ঘজীবনের আসল অর্থ খুঁজে পাওয়া জরুরি। প্রতিদিন সকালে উঠেই যদি আপনার মনে হয় আপনি কাউকে ভালোবাসেন, কোনো কাজ আপনাকে আনন্দ দেয় বা কোনো দায়িত্বে আপনার গুরুত্ব আছে—তাহলেই জীবনের প্রতি একধরনের উদ্দীপনা তৈরি হয়। এটি শুধু কাজ নয়—শখ, পরিবার, বাগান পরিচর্যা বা মানুষের সেবার মধ্যেও ইকিগাই পাওয়া সম্ভব।
২. কাইজেন (Kaizen): ধারাবাহিক উন্নয়নের দর্শন
‘বড় পরিবর্তন নয়, ছোট ছোট উন্নতি’—এই মূলনীতিতেই বিশ্বাস কাইজেন দর্শনের। কর্মক্ষেত্রে দলবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান, গৃহস্থালি গুছিয়ে রাখা কিংবা ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো—সব ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। প্রতিদিন মাত্র ১ শতাংশ উন্নতির লক্ষ্য রাখলেই দেখা যাবে মাস শেষে আপনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।
৩. হারা হাচি বু (Hara Hachi Bu): পেট ভরার আগেই থেমে যাওয়া
জাপানি ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দারা খাবার খান এমনভাবে, যাতে ১০০ শতাংশ না খেয়ে ৮০ শতাংশেই থেমে যান। এতে হজম ভালো হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও বলে, ধীরে ধীরে এবং সচেতনভাবে খেলে শরীর নিজেই বলে দেয় কখন থামা উচিত।
৪. ওয়াবি-সাবি (Wabi-Sabi): অসম্পূর্ণতার সৌন্দর্য
জীবনের প্রতিটি খুঁত বা অসম্পূর্ণতাকেই সৌন্দর্য হিসেবে দেখা—এই দর্শন শেখায় ওয়াবি-সাবি। ‘নিখুঁত’ হওয়ার দৌড়ে না ছুটে যা আছে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, বাড়িতে হাতের তৈরি জিনিস ব্যবহার করা কিংবা পুরোনো জিনিসের মধ্যেও সৌন্দর্য খুঁজে নেওয়া—এসবই ওয়াবি-সাবির চর্চা। এতে মন শান্ত থাকে এবং জীবনে একধরনের ভারসাম্য আসে।
৫. শিরিন ইয়োকু (Shinrin Yoku): বনস্নান বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো
১৯৮০-এর দশকে শুরু হওয়া এই ধারণা অনুযায়ী, গাছপালা থেকে নির্গত ‘ফাইটনসাইড’ নামক প্রাকৃতিক উপাদান মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ঘন বন বা সবুজ প্রকৃতিতে সময় কাটানো, ফোন বা ল্যাপটপ থেকে কিছু সময় দূরে থাকা এবং প্রকৃতির শব্দ-রং-গন্ধ উপভোগ করাই এই অনুশীলনের মূল।
৬. শোশিন (Shoshin): শেখার জন্য খোলা মন রাখা
‘শোশিন’ হলো জেন বৌদ্ধধর্মের একটি ধারণা, যার অর্থ—শেখার শুরুতে যেমন মন খোলা থাকে, সেই মনোভাব ধরে রাখা। কোনো বিষয়ে আপনি যত জ্ঞানী হোন না কেন, যদি আপনি প্রতিনিয়ত কৌতূহলী এবং শেখার মানসিকতা রাখেন, তাহলে আপনি কখনোই স্থবির হয়ে পড়বেন না। প্রতিদিন নতুন কিছু জানার চেষ্টা, ভুল থেকে শেখা এবং নিজেকে বিনয়ী রাখা—এসবই শোশিনের অংশ।
জাপানি এই ছয় দর্শন কেবল আলসেমি দূর করে না, বরং জীবনকে গুছিয়ে তোলে এক অর্থবোধক ও স্বাস্থ্যকর পথে। আপনি যদি প্রতিদিনের জীবনে এসব দর্শন প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে নিজের মধ্যেই খুঁজে পাবেন এক নতুন উদ্যম—নতুন করে বাঁচার প্রেরণা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব