
ছবিঃ সংগৃহীত
শিশুরা হঠাৎ করেই যেন ‘না’ বলার কারিগর হয়ে ওঠে। আপনি জিজ্ঞাসা করলেন, “পার্কে যেতে চাও?” — উত্তর আসে, “না।” “কুকি খাবে?” — তবুও “না।” যদিও পাঁচ সেকেন্ড পরেই সেই কুকিই খেতে চায়।
এই 'না' পর্বটা আসলে বেশ স্বাভাবিক এবং এটি কোনো বিদ্রোহ নয়। শিশুরা যখন ১ বছর পেরিয়ে নিজেদের স্বাধীনতা আবিষ্কার করে, তখনই তারা নিয়ন্ত্রণের অনুশীলনে নামে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিভাবকদের উচিত এই সময়ে শান্ত থাকা, প্রতিটি বিষয়ে লড়াই না করে বেছে নেওয়া এবং শিশুদের বিকল্প পছন্দ দেওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতি সহজ রাখা।
শিশুর ‘না’ বলার আচরণ কীভাবে সামলাবেন?
১. শান্ত থাকুন, যত কঠিনই হোক না কেন
শিশুর সঙ্গে রাগ করে বা উচ্চস্বরে কথা বলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বরং আপনি শান্ত থাকলে শিশু শেখে কীভাবে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আপনার প্রতিক্রিয়া যেন হয় সচেতন, না যে মুহূর্তের রাগ।
২. নির্দেশের বদলে বিকল্প দিন
একজন যদি আপনাকে সারা দিন শুধু নির্দেশই দিয়ে যায়, আপনিও বিরক্ত হয়ে উঠবেন। শিশুর ক্ষেত্রেও একই। “জুতো পরো” বলার বদলে বলুন, “নীল জুতো পরবে, না লালটা?” এতে তারা নিয়ন্ত্রণ অনুভব করে, এবং ‘না’ বলার প্রবণতা কমে।
৩. পরিষ্কার ও নিয়মিত সীমা নির্ধারণ করুন
ইতিবাচক শৃঙ্খলা মানে শিশুকে যা খুশি করার সুযোগ দেওয়া নয়। আপনি স্থির ও সম্মানজনকভাবে সীমারেখা নির্ধারণ করুন। বলুন, “আমি বুঝি তুমি এটা করতে চাও না, কিন্তু এটা করতেই হবে।” এরপর নিজের কথায় অটল থাকুন। এতে শিশুরা নিরাপত্তা অনুভব করে।
৪. রসবোধ ব্যবহার করুন
মাঝেমধ্যে গম্ভীর পরিবেশ ভাঙতে হাস্যরসই যথেষ্ট। মজার মুখভঙ্গি, হাস্যকর কণ্ঠ বা কল্পনায় সিরিয়াল বাক্সকে ওয়াকিটকি বানিয়ে ফেলুন। এতে শিশুর মন হালকা হয় এবং সহযোগিতায় রাজি হয়।
৫. ‘হ্যাঁ’ বললে প্রশংসা করুন
যখনই তারা সহযোগিতা করে—ছোট হোক বা বড়—তখন তা স্বীকৃতি দিন। “ধন্যবাদ খেলনার জিনিসগুলো তুলে রাখার জন্য” কিংবা “তুমি হাত ধুতে রাজি হওয়ায় ভালো লাগল”—এই কথাগুলো শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং সহযোগিতা বাড়ে।
৬. ‘না’ এর পেছনে কারণ খুঁজুন
প্রতিটি ‘না’ মানে অবাধ্যতা নয়। কখনও তা হতে পারে—“আমি ক্লান্ত”, “আমি বুঝতে পারছি না” বা “আমার আরও সময় দরকার”। ধীর হয়ে জিজ্ঞেস করুন, “তুমি কি রেগে গেছ?” কিংবা “তুমি না বললে কারণ কী?”—এতে শিশু তার আবেগ বুঝতে শেখে।
আপনার শিশুর ‘না’ বলা মানেই আপনার ব্যর্থতা নয়। এটি তার আত্মপরিচয়ের সূচনা, মত প্রকাশের শুরু। আপনি যতটা ভাবছেন, আপনি আসলে তার চেয়েও ভালো করছেন। প্রতিটি ‘না’ একটি সুযোগ—বিশ্বাস গড়ার, ধৈর্য শেখানোর, এবং বোঝানোর যে শৃঙ্খলা মানেই চিৎকার নয়, হতে পারে ভালোবাসা, স্থিতিশীলতা এবং মাঝে মাঝে লিভিং রুমে নাচের উৎসব!
সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা