
ছবি: সংগৃহীত।
হৃদরোগ নিয়ে সাধারণত আমরা যে বিষয়গুলোতে নজর দিই, তা হলো কোলেস্টেরল, রক্তচাপ কিংবা কখনও কখনও স্ট্রেস টেস্ট। কিন্তু এমন একটি স্ক্যান রয়েছে যা উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের প্রকৃত ঝুঁকি জানাতে পারে। এটি হলো Coronary Artery Calcium (CAC) টেস্ট-একটি দ্রুত, ব্যথাহীন সিটিস্ক্যান যা হৃদপিণ্ডের ধমনিতে ক্যালসিয়াম জমার উপস্থিতি শনাক্ত করে।
এই স্ক্যানটি কোলেস্টেরলের মাত্রার চেয়েও বেশি কার্যকর বলে গবেষণা বলছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেশিরভাগ মানুষ এই পরীক্ষার নামই শোনেননি।
CAC টেস্ট কী?
Coronary Artery Calcium বা CAC টেস্ট একটি সাধারণ, অ ইনভেসিভ সিটি স্ক্যান যা হৃদপিণ্ডের ধমনীতে ক্যালসিয়াম জমেছে কিনা তা দেখে। এই ক্যালসিয়াম আসলে শক্ত হয়ে যাওয়া প্লাক, যা চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থের জমা থেকে তৈরি হয়। এটি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ-করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD)-এর ইঙ্গিত দেয়।
এক কথায়, কোলেস্টেরল টেস্ট যেন মোড়ানো উপহারের মতো-ভেতরে কী আছে তা অনুমান করা যায়। কিন্তু CAC স্ক্যান সেই মোড়ানো উপহার খুলে দেখে দেয়, আদৌ কোনও বিপদ লুকিয়ে আছে কি না।
বিশেষজ্ঞের মতামত:
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসকারোন সেন্টারের ডিরেক্টর ড. মাইকেল ব্লাহা বলেন,
“CAC স্ক্যান সবার জন্য নয়, তবে যাঁরা নিজের হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ে অনিশ্চিত, তাঁদের জন্য এটি চিকিৎসা ও ওষুধ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।”
কেন এই টেস্ট গুরুত্বপূর্ণ?
CAC স্ক্যান কেবলমাত্র হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়কই নয়, এটি অনেক দিক থেকে গেম চেঞ্জার:
উপসর্গ শুরু হওয়ার আগেই প্লাক শনাক্ত করতে পারে।
কোলেস্টেরল মাত্রার চেয়ে বেশি নির্ভুলতায় ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারে।
প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা, বিশেষ করে স্ট্যাটিন ওষুধ শুরু করা উচিত কিনা তা বুঝতে সহায়তা করে
একটি “ক্যালসিয়াম স্কোর” দেয়-যেটা ০ থেকে ১০০০+ পর্যন্ত হতে পারে। স্কোর যত বেশি, ঝুঁকি তত বেশি।
কারা এই টেস্ট করাবেন?
CAC টেস্ট সবাইকে করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় না। তবে যাঁরা:
বয়স ৪০-৮০ বছরের মধ্যে
বয়স, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান বা পারিবারিক ইতিহাসের ভিত্তিতে ‘মধ্যম ঝুঁকির’ বলে বিবেচিত
স্ট্যাটিন ওষুধ নেওয়া উচিত কি না সে বিষয়ে দ্বিধায়
পরিবারে অল্প বয়সে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে
তাঁদের ক্ষেত্রে এই স্ক্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণ হতে পারে।
গবেষণা কী বলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের MESA স্টাডি (Multi-Ethnic Study of Atherosclerosis) দেখিয়েছে, CAC স্ক্যান অনেক বেশি নির্ভুলভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারে।
২০১৩ সালে প্রকাশিত ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, যাঁদের প্রচলিত মাপকাঠিতে “কম ঝুঁকিপূর্ণ” বলা হয়েছিল, তাঁদের ১৫ শতাংশের উচ্চ ক্যালসিয়াম স্কোর ছিল। আবার “উচ্চ ঝুঁকির” বলা অনেকের স্কোর ছিল শূন্য-যার মানে, তাঁদের ঝুঁকি হয়তো অতটা গুরুতর নয়।
সতর্কতা ও করণীয়
এই স্ক্যান যেমন নির্ভরযোগ্য, তেমনি একে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করানো উচিত নয়। স্ক্যানের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা জীবনধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগ অনেক সময় "নীরব ঘাতক" হিসেবে কাজ করে। CAC স্ক্যান এমন এক ঝুঁকি নির্ধারক যেটি আগেভাগেই বিপদের সতর্কবার্তা দিতে পারে। এটি সময়মতো চিকিৎসা শুরু বা মানসিক নিশ্চয়তা-দুটোই এনে দিতে পারে।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান