
ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের প্রবাসীবহুল জনপদে গাড়ি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিনের এক ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন ‘সেলফ-ড্রাইভ’ কার ভাড়া সেবা চালু হয়েছে। সেবাটির নাম ‘ইউড্রাইভ’। উদ্যোক্তা চার তরুণের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে শহরের পরিবহন খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সিলেটে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার প্রবাসী ফিরে আসেন ছুটি কাটাতে। অনেকেই চায় স্বাধীনভাবে নিজেই গাড়ি চালিয়ে ঘোরাঘুরি করতে। কিন্তু দেশে গাড়ি ভাড়া মানেই ড্রাইভারসহ—এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসী পিনাক দে সম্প্রতি সিলেটে এসে এই সমস্যারই সম্মুখীন হন। প্রাথমিকভাবে একটি গাড়ি ভাড়া নেন, কিন্তু ড্রাইভারের সীমাবদ্ধতা, শর্ত আর অতিরিক্ত কথাবার্তা তাকে বিরক্ত করে তোলে।
‘চাইলেই কোথাও যাওয়া যেত না। ড্রাইভার সবসময় কিছু না কিছু বলতেই থাকত। আর গাড়ির একটি আসন তো এমনিতেই তার জন্য বরাদ্দ,’ বলেন পিনাক।
পরে বাধ্য হয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে নিজেই একটি গাড়ি কিনে নেন তিনি। ‘ফিরে যাওয়ার আগে বিক্রি করব, তবে তাতে অনেক ক্ষতি হবে,’ আক্ষেপ করে বলেন তিনি।
এই সমস্যা থেকেই সমাধানের চিন্তা করেন চার তরুণ—আফজাল হোসেন চৌধুরী, এনামুল হাসান, ইফতেখার ইরাদ এবং যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শিব্বির আহমেদ। তাঁদের যৌথ উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে ‘ইউড্রাইভ’—সিলেটের প্রথম চালকবিহীন গাড়ি ভাড়া সেবা।
কীভাবে কাজ করে ইউড্রাইভ?
‘ইউড্রাইভ’ থেকে মের্সিডিজ, টয়োটা করোলা, অ্যালিয়নসহ বিভিন্ন মডেলের গাড়ি চালক ছাড়া ভাড়া নেওয়া যায়। গ্রাহককে অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রমাণপত্র দিয়ে একটি সহজ রেজিস্ট্রেশন ও যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।
সেবার মূল্যও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী—১২ ঘণ্টার জন্য ন্যূনতম ২,৫০০ টাকা।
চলতি বছরের ২৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সেবাটির যাত্রা শুরু হলেও, জানুয়ারি থেকে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু ছিল। ইতোমধ্যে ৫০০টিরও বেশি ট্রিপ সম্পন্ন করেছে ইউড্রাইভ, এবং রয়েছে ৭০ জনের বেশি নিয়মিত গ্রাহক।
‘অনেক প্রবাসী ও পর্যটক স্বাধীনভাবে ঘুরতে চান, ড্রাইভারের বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই। সেই চাহিদা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ,’ বলেন সহ-প্রতিষ্ঠাতা আফজাল হোসেন চৌধুরী।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার কেন্দ্রিক ১৬টি গাড়ি নিয়ে চালু হলেও, চলতি বছরের মধ্যেই ১০০ গাড়ির বহর এবং ১০,০০০ ট্রিপ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ইউড্রাইভ টিম।
‘চাইলে প্রবাসীরা আমাদের ফেসবুক পেজ থেকেই আগেভাগে গাড়ি বুক করতে পারবেন। তাদের আসার সময় বিমানবন্দরেই গাড়ি রেডি থাকবে,’ বলেন আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইফতেখার ইরাদ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামেও শিগগিরই সেবাটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
‘গেম চেঞ্জার’ বলছেন ব্যবহারকারীরা
একটি পর্যটন সংস্থা চালানো শেখ রাফি বলেন, ‘অনেক ক্লায়েন্ট পরিবার নিয়ে নিজেদের মতো করে ঘুরতে চায়। ইউড্রাইভ ঠিক সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা সত্যিই একটি গেম চেঞ্জার।’
তবে তিনি মনে করেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য যাচাই প্রক্রিয়া আরও সরল করা দরকার।
আরেক গ্রাহক, প্রবাসী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিদেশে এমন সেবা ব্যবহার করেছি, কিন্তু সিলেটে এটা প্রথমবার পাচ্ছি। আমার আত্মীয়রা খুবই খুশি।’
সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে পর্যটক, প্রবাসী কিংবা স্থানীয় বাসিন্দা—সবাই ইউড্রাইভের স্বাধীন, ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ সুবিধাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।
রাকিব