ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারা তৈরি ও বিক্রি চলছে অবাধে

মোঃ সামানুর ইসলাম, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১২:০৪, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:০৫, ২৮ জুলাই ২০২৫

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারা তৈরি ও বিক্রি চলছে অবাধে

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারা

পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে সরকারি নির্দেশনা জারির পরও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে অবাধে এসব গাছের চারা তৈরি, রোপণ ও বিক্রি হচ্ছে।

গত ১৫ মে ২০২৫, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির মতো আগ্রাসী প্রজাতির গাছের পরিবর্তে দেশীয় ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি মাটি থেকে অত্যধিক পরিমাণে পানি শোষণ করে। ফলে মাটির আর্দ্রতা হ্রাস পায় এবং এই গাছের পাতায় থাকা বিষাক্ত টক্সিন আশপাশের মাটিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। এর ফলে উর্বরতা নষ্ট হয় এবং আশেপাশে কোনো অন্য গাছ সহজে জন্মাতে পারে না। এমনকি জীববৈচিত্র্যের ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, কারণ স্থানীয় পাখি, কীট-পতঙ্গ বা অন্যান্য প্রাণী এই গাছে বাসা বাঁধে না বা খাদ্য খুঁজে পায় না।

তবুও, বালিয়াডাঙ্গীর বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে দেখা যায়—প্রায় প্রতিটি নার্সারিতে হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারা তৈরি ও বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ জুলাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ১৬টি নার্সারিতে প্রায় ৯০ হাজার ইউক্যালিপটাস চারা ধ্বংস করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঠাকুরগাঁও জেলার জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা ও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম। এই অভিযানের পরও বালিয়াডাঙ্গীতে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, “যত্রতত্র ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনির চারা তৈরি ও বিক্রি হচ্ছে। পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই গাছগুলো যাতে কেউ তৈরি বা বিক্রি করতে না পারে, সেই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি আগে জানতাম না যে এগুলো ক্ষতিকর। এখন জেনেছি, ভবিষ্যতে আর এই দুটি গাছের চারা কিনবো না বা রোপণ করবো না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, “সরকার এই প্রজাতির চারা নিষিদ্ধ করেছে। আমরা ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নেব। যখন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে, তখন আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।”

তাসমিম

আরো পড়ুন  

×